প্রতীকী ছবি।
প্রতি বছর এ সময়ে বড় করে শীতলা পুজো করেন ওঁরা। গোটা বছর ধরে সেই পুজোর জন্য টাকা জমানো হয়। এ বার করোনা-আতঙ্কে শীতলা পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওঁরা। আর ওই পুজোর জন্য জমানো টাকা দিয়ে তাঁরা খাবার খাওয়াচ্ছেন শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে আসা রোগীর পরিজনেদের।
প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড সংলগ্ন লেক গার্ডেন্স এলাকার একটি ক্লাবের ওই যুবকেরা এক দুপুরে ব্যস্ত ছিলেন সেই খাবারের প্যাকেট তৈরি করতে। খাবারের সঙ্গে তাঁরা দিচ্ছেন হাত ধোয়ার সাবান এবং পানীয় জলের বোতলও। প্যাকেটে খাবার ভরতে ভরতেই জয়ন্ত হালদার নামে ক্লাবের এক সদস্য বললেন, ‘‘বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে আসা লোকজন প্রতীক্ষালয়েই দিন কাটাচ্ছেন। বাস-ট্রেন বন্ধ। তাই বাড়ি যাওয়ারও উপায় নেই।’’ জয়ন্ত জানান, তাঁরা খবর পেয়েছেন, হোটেল বন্ধ থাকায় রোগীর পরিজনেরা ঠিক মতো খেতে পাচ্ছেন না। তাই বিপদে পড়া ওই মানুষগুলির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। ফের ওই ভাবে খাবার দেবেন তাঁরা। এম আর বাঙুর, এসএসকেএম এবং শম্ভুনাথ
পণ্ডিত হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়ে যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁদের জন্য ওই সব খাবারের প্যাকেট নিয়ে যাবেন তাঁরা।
খাবারের প্যাকেটে রয়েছে মুড়ি, কলা, লেবু, কেক, বিস্কুট, মিষ্টি। সেই সঙ্গে হাত ধোয়ার সাবান এবং পানীয় জলও। ক্লাবের আর এক সদস্য শম্ভুনাথ সর্দার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন। তিনি বললেন, ‘‘এই শীতলা পুজোর দিকে আমরা সারা বছর তাকিয়ে থাকি। এই পুজোটাই আমাদের ক্লাবের সব চেয়ে বড় পুজো। সেই উপলক্ষে সাত দিন ধরে নানা অনুষ্ঠান হয়। ছোট মেলাও বসে। এ বার সব কিছু বাতিল হওয়ায় সকলেরই খুব মন খারাপ। কিন্তু এই করোনা-আতঙ্কের মধ্যে তো আর পুজো করা যায় না।’’
লেক গার্ডেন্স সুপার মার্কেটের কাছে ওই ক্লাব। সদস্যদের বেশির ভাগই ছোটখাটো কাজ করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই করোনার জন্য ঘরে বসে আছেন। এমনই এক ক্লাব-সদস্য রাজা রায় পেশায় গাড়িচালক। হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরে তিনিও হাত লাগিয়েছিলেন খাবারের প্যাকেট তৈরির কাজে। ক্লাবের সদস্যেরা জানালেন, ক্লাবের অনেকেই আর্থিক কষ্টে আছেন। তবু তাঁদের থেকেও যাঁরা বেশি অসহায়, তাঁদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।