প্রতীকী ছবি।
ইদের আগে ভূস্বর্গে ফেরা সম্ভব নয়। তবু ঝড়ে ধ্বস্ত কলকাতা ছেড়ে ঘরে ফেরার আগে নুর মহম্মদ ডার বা মোক্তার আহমেদ ওয়ানিরা খানিক আফশোস করে গেলেন।
সেই মার্চের শেষ থেকে ট্রেন বা বিমানে ফেরার টিকিট কেটে বসে থাকা, বাংলা ও জম্মু-কাশ্মীরের হেল্পলাইনে নিষ্ফল ফোনের পর ফোন। সংবাদমাধ্যম থেকে প্রশাসনের নানা স্তরে মাথা খুঁড়ে অসহায় অনুরোধ। করোনা-সঙ্কটে দেশে লকডাউন শুরু হওয়া ইস্তক এই ঘরে ফেরার পর্ব যেন আস্ত মহাভারত। শনিবার সকাল থেকে দু’দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে বিকেল তিনটেয় শালিমার স্টেশন থেকে ঢাউস এক্সপ্রেস ট্রেনটায় উঠে কলকাতার মাদুরদহের বাসিন্দা কাশ্মীরি শালওয়ালা মোক্তারভাই অল্প হাসলেন। “উফ্, এত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে এমন ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে সামাজিক দূরত্বের এই হাল!” তালতলার ইমদাদ আলি লেনের ভাড়াটে নুর বলেন, “লকডাউন-কার্ফু তো কাশ্মীরেও দেখেছি। কিন্তু নিজের লোকেদের ছেড়ে ঘরবন্দি থাকার জ্বালা নেওয়া যাচ্ছিল না!”
ইতিমধ্যে হাওড়ার বাসিন্দা কাশ্মীরিদের অনেকে অবসাদে ডুবেছেন। জোকা, বাঘা যতীনে বাড়ি ভাড়া মেটাতে পারছিলেন না অনেক শালওয়ালা। সহ-নাগরিকেরা চাঁদা তুলে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শালওয়ালারা বেশির ভাগই প্রাপ্য টাকা তুলতে পারেননি। তবু মেটিয়াবুরুজ, জোকার অনেকে ধার করে গাড়ি ভাড়া নিয়ে আগেই ফিরেছেন। মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধের আগে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনও কাউকে ফেরানোর হেলদোল দেখায়নি। তার উপরে আমপানের ধাক্কা ফেরার দিন পিছিয়ে দেয়। নুর বলছিলেন, “ঝড়ের সময়ে দোতলার ঘরেও হাঁটুজল নিয়ে বন্দি ছিলাম।” গত দু’মাসের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “মনে হচ্ছিল আমরা যেন দেশের কেউ নই। কলকাতার মানুষ সাহায্য করতে চেয়েছেন। সরকার দেরি করল।” মোক্তারের ঘনিষ্ঠ মাদুরদহের প্রবীণ নাগরিক মৃত্যুঞ্জয় সরকারের মতো কেউ কেউ শালওয়ালাদের সঙ্গে নবান্ন বা শ্রীনগর প্রশাসনের যোগাযোগ করাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন।
এ দিন অবশ্য শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গাড়িতে স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হল তাঁদের। অন্য জায়গার শালওয়ালারাও উঠবেন ট্রেনে। শ্রীনগর পৌঁছতে অন্তত মঙ্গলবার। ইদে পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়া তাই অসম্ভব।