উত্তর কলকাতার এক কারখানায় মোমবাতি বার করছেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ধর্ষণের ঘটনার সুবিচার চেয়েই হোক বা কোনও ঘটনার প্রতিবাদ। দেশ জুড়ে মোমবাতি-মিছিল নতুন নয়। কিন্তু, করোনা আক্রান্ত দেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যেতে মোমবাতি জ্বালানো? শুক্রবার সকালে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতায় ঠিক এই আবেদনই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী রবিবার, ৫ এপ্রিল রাত ৯টায় ন’মিনিট সময় চেয়ে নিয়েছেন তিনি। এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই দিন রাত ৯টায় দেশের সব মানুষ ন’মিনিটের জন্য ঘরের আলো নিভিয়ে দরজার কাছে একটি মোমবাতি বা প্রদীপ বা কিছু না পেলে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে দাঁড়ান। এতে সকলে সকলের পাশে আছেন বলে মনে হবে।’’ এই ঘোষণার পর থেকেই কলকাতার কোনও কোনও ব্যবসায়ীর মোবাইল বেজে উঠছে ঘনঘন। খুচরো ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে পাঁচশো, দুশো, একশো মোমবাতি চাই বলে ফোন এসেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, লকডাউনের শহরে খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে মোমবাতি পৌঁছবে কেমন করে? ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়াক্স বেসড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক সমীর দে জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে তাঁর কাছে অন্তত ২০টি ফোন এসেছে। কেউ ৫০০, কেউ ২০০ মোমবাতি চেয়েছেন। কিন্তু সমীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘গুদামে মোমবাতি মজুত রয়েছে। তা পৌঁছবে কী ভাবে?’’ তা হলে কি তিনি অর্ডার নিচ্ছেন না? সমীরবাবু জানালেন, যাঁরা ফোন করেছেন তাঁদের তিনি বলেছেন পুলিশের থেকে লিখিয়ে আনতে।
একই বক্তব্য বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের ব্যবসায়ী তুহিন মুখোপাধ্যায়ের। তিনি নানা ছাঁচের মোমবাতি তৈরি করেন। এ দিন কয়েক জন খুচরো ব্যবসায়ী ফোন করেছেন তাঁকে। একটি কারখানার মালিক ৫০০ মোমবাতি চেয়েছেন। কিন্তু তুহিন বুঝতে পারছেন না বিক্রি করবেন কী করে!
তবে মোমবাতি কারখানার মালিকদের কাছে ফোন এলেও, প্রদীপ তৈরির কারিগরদের কাছে তেমন ফোন আসেনি। তেলেঙ্গাবাগান সংলগ্ন গুরুদাস দত্ত গার্ডেন লেনের সানি প্রজাপতি সারা বছর প্রদীপ তৈরি করেন। তিনি জানালেন, প্রদীপ চেয়ে তাঁর কাছে ফোন আসেনি। সানির কথায়, ‘‘শুধু মোমবাতি বা প্রদীপ নয়। প্রধানমন্ত্রী মোবাইলের টর্চও জ্বালাতে বলেছেন। সকলে হয়তো তা-ই করবেন।’’ একই কথা সানির পড়শি সোমা প্রজাপতি ও বিকাশ প্রজাপতির। তাঁদের প্রদীপ তৈরি বন্ধ ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে। এখন মরসুম নয় বলে তেমন প্রদীপ মজুত নেই। আর কোনও অর্ডারও নেই।