দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু—ফাইল চিত্র
কোভিড আক্রান্ত হলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু। এই প্রথম রাজ্যের কোনও মন্ত্রী করোনা আক্রান্ত হলেন। তবে হাসপাতালে নয়, বাড়িতে থেকেই চিকিৎসাধীন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে মন্ত্রীর বাড়ির পরিচারিকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হলে কোভিড পজিটিভ পাওয়া যায়। এর পরই মন্ত্রী সপরিবারে ফুলবাগান থানা এলাকায়, ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিজেই যান কোভিড পরীক্ষা করাতে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মন্ত্রীর লালারসের নমুনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, সুজিত বাবুর শরীরে কোনও উপসর্গ নেই। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসাধীন। সুজিত বাবুর স্ত্রী এবং পরিবারের বাকিদের রিপোর্ট সম্পর্কে অবশ্য কিছু জানাননি মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: করোনা-কাঁটা নিয়েই নামল প্রথম উড়ান
তবে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সুজিত বাবুর স্ত্রী, দুই ছেলে, মেয়ে এবং অন্য এক পরিচারিকার কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। স্ত্রী এবং অন্য পরিচারিকার শরীরেও সংক্রমনের হদিশ মিলেছে। তবে তাঁদেরও এখনও পর্যন্ত কোনও উপসর্গ না থাকায় বাড়়িতে রেখেই চিকিৎসা করা সম্ভব। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানিয়েছেন, নিয়ম মেনেই সুজিত বাবুর সংস্পর্শে কারা ছিলেন তাঁদের চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনে পাঠানো হবে। বুধবারই হাওড়ায় দমকলকর্মীর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে হাওড়ায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে দফতরের আধিকারিক ছাড়াও সাংবাদিকরাও তাঁর সংস্পর্শে আসেন।
আরও পড়ুন: উপড়ে পড়া গাছ রাখতে সেনার অনুমতি পেল না কলকাতা পুরসভা
সুজিত বাবুর আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ফলতার তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা তমোনাশ বাবু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর পরিবারের আরও দু’জন এবং তাঁর সংস্পর্শে আসা আরও তিনজনের শরীরেও পাওয়া গিয়েছে কোভিডের জীবাণু। তাঁরাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সুজিত বসুর কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসতেই জল্পনা শুরু হয়েছে আর এক মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিয়েও। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় কয়েক দিন আগেই বৈঠক করেছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিতের সঙ্গে। সুতরাং অবিলম্বে জ্যোতিপ্রিয়র কোয়রান্টিনে চলে যাওয়া উচিত বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।
দল এবং সরকারের কাজ একসঙ্গে সামলাতে হয় বলে জ্যোতিপ্রিয়কে রোজই বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হয়, বহু লোকের সঙ্গে রোজ দেখা করতে হয়। আমপান পরবর্তী পরিস্থিতিতে জ্যোতিপ্রিয়র সেই দৌড় স্বাভাবিক কারণেই আরও বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে তো বটেই, কখনও কখনও নীচের স্তরের আধিকারিক এবং তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তাঁকে দেখা করতে হচ্ছে। সুজিত বসুর সঙ্গেও গত কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী-সহ জেলা প্রশাসনের কয়েক জন শীর্ষকর্তার বৈঠক হয়েছে বলে খবর। তা হলে কি এঁদের সবাইকেই এখনই কোয়রান্টিনে যেতে হবে?
জেলা প্রশাসন বা জেলা স্বাস্থ্য দফতর এ বিষয় নিয়ে কী ভাবছে, জানা যায়নি। তবে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে সুজিত বসুর যে দিন বৈঠক হয়েছিল, সে দিন আমি ওঁর থেকে অনেক দূরে বসেছিলাম। সুজিত বসুর সঙ্গে আমার অন্তত ৪-৫ মিটার দূরত্ব ছিল। সে দিনই বসিরহাটেও একটা কর্মসূচিতে সুজিতের যাওয়ার কথা ছিল। ওঁকে আমরা সেখানে যেতে দিইনি। সামাজিক দূরত্ব বিধি আমরা সবাই ভাল ভাবেই পালন করেছি। সুতরাং কারও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’