জনহীন: বন্ধ নয়। আতঙ্কের নাম করোনা। সপ্তাহের কাজের দিনে সকাল দশটায় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
গত বছরে অতিমারির প্রথম ধাক্কায় লকডাউন করে সতর্ক করতে হয়েছিল মানুষকে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে লাগাতার সচেতনতার প্রচার সত্ত্বেও হুঁশ ফেরেনি শহরবাসীর একাংশের। দোকান-বাজার-শপিং মলে সুরক্ষা-বিধি না মেনেই ঘুরেছেন তাঁরা।
তবে সম্প্রতি পরপর কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটার পরে কি স্বেচ্ছায় নিজেকে ঘরবন্দি করেছে মানুষ? গত দু’দিনের কলকাতা শহরের পথের চিত্র অন্তত সেই প্রশ্নই উস্কে দিচ্ছে। বুধবার শহরের রাস্তাঘাট ছিল কার্যত জনহীন। যে অল্প কিছু বাস এবং অন্য যানবাহন চলেছে, তাতেও যাত্রী ছিল হতে গোনা। যদিও সপ্তাহখানেক আগেই দেখা গিয়েছিল ঠিক উল্টো ছবি। বিভিন্ন শপিং মল ও বাজারে উপচে পড়েছিল ভিড়। দোকানে দোকানে ভিড় করে চৈত্র সেলের কেনাকাটা করছিলেন অত্যুৎসাহীরা। এ দিন নিউ মার্কেট ও গড়িয়াহাট চত্বরের সেই দোকানগুলি প্রায় মাছি তাড়িয়েছে।
চেনা ভিড় উধাও রাজপথেও। শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা ইএম বাইপাস, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এ জে সি বসু রোডে চোখে পড়েনি গাড়ির ভিড়। এমনকি উল্টোডাঙা, শিয়ালদহ, রাসবিহারী মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতেও লোকজন ছিল না বললেই চলে। ভিড় ছিল না ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডেও। সকালে রাস্তায় যাও বা লোকজন বেরিয়েছিলেন, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবিও আর দেখা যায়নি।
এমনিতেই আজ, বৃহস্পতিবার মধ্য ও উত্তর কলকাতায় ভোট। নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বহু বাস। হাতে গোনা যে সংখ্যক বাস বিভিন্ন রুটে চলছে, তাতেও যাত্রী প্রায় নেই। সকালে অফিস টাইমে সেই গাদাগাদি ভিড় উধাও। বাস কম চলার পাশাপাশি যাত্রী সংখ্যা কম থাকার কথা মেনে নিয়েছেন বিভিন্ন বাস সংগঠনের নেতৃত্বও।
সব দেখেশুনে অনেকেরই জিজ্ঞাস্য, তা হলে কি করোনায় মৃত্যু দেখে কিছুটা ভয় পেয়েই নিজেদের ঘরবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শহরবাসী? এ দিন অফিস যাওয়ার পথে উল্টোডাঙায় দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী মৃত্যুঞ্জয় দাস। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যদি খানিকটা ভয় পেয়ে বাড়ি থেকে না বেরোন, তা হলে সেটাকে বলব মন্দের ভাল। এমনিতেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এর পরেও বিনা কারণে লোকে রাস্তায় বেরোলে সংক্রমণে আর রাশ টানা যাবে না।’’
জরুরি ওষুধ কিনতে এ দিন হাওড়া থেকে কলকাতায় এসেছিলেন বছর পঞ্চাশের মানস সেনগুপ্ত। ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘কাজের সূত্রে প্রায়ই কলকাতায় আসতে হয়। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই দেখছি, রাস্তায় লোকজন তুলনামূলক ভাবে কম। বুধবার তো লোক প্রায় ছিল না বললেই চলে।’’
যদিও এ বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘মানুষ খানিকটা ভয় পেয়েছেন ঠিকই। আসলে প্রত্যেকেরই পরিচিত-বৃত্তে কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত। স্বাভাবিক ভাবেই একটা ভয় কাজ করছে। ফলে অকারণে রাস্তায় বেরোনোর প্রবণতা কমছে। তবে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বেড়েছে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’
ভয়ই হোক অথবা সচেতনতা, রাস্তায় ভিড় কমাকে অন্তত খারাপ ভাবে নিচ্ছেন না নাগরিকেরা। বরং এ ভাবে কিছু দিন চললে করোনার লেখচিত্র নিম্নমুখী হবে বলেই অভিমত তাঁদের।