বাঁধ ভাঙা: গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীদের লাগামহীন ভিড়। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে ভিন্ রাজ্য থেকে শহরে আসা সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের কেউ এখনও পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত নন। গত ১ জানুয়ারি থেকে কলকাতার বঙ্গবাসী ময়দানে আসা প্রায় ১০ হাজার পুণ্যার্থীদের পর্যবেক্ষণ করে এমনই দাবি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, উট্রাম ঘাট সংলগ্ন বঙ্গবাসী ময়দানে দু’টি অস্থায়ী চিকিৎসা শিবিরে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের কোভিড পরীক্ষা করানো হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সেই পরীক্ষায় একটি রিপোর্টও পজ়িটিভ আসেনি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে আসা বাসগুলি বঙ্গবাসী ময়দানে দাঁড়ানোর পরে জেলা প্রশাসনের বিশেষ কোভিড প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রথমে পুণ্যার্থীদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন। তাঁদের শরীরে কোনও উপসর্গ রয়েছে কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করছেন। পুণ্যার্থীদের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত ওই অস্থায়ী চিকিৎসা শিবিরে সাধু, সন্ন্যাসী-সহ প্রায় শ’দুয়েক পুণ্যার্থীর কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কারও শরীরে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কেউ সংক্রমিত হলে সেই সংক্রান্ত সবরকম চিকিৎসা ব্যবস্থা ওই ময়দান সংলগ্ন এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রতিটি পুণ্যার্থীকে পর্যবেক্ষণ করছেন। বঙ্গবাসী ময়দান ও মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় দু’টি অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই অস্থায়ী চিকিৎসালয়ে দিন-রাত রয়েছেন। কোনও রকম উপসর্গ অথবা কারও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলেই ওই অস্থায়ী চিকিৎসা শিবিরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁকে। সেখানে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের পরে তার পিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত একটি পৃথক শিবিরে রাখা হচ্ছে ওই পুণ্যার্থীকে। তবে অধিকাংশ পুণ্যার্থী এবং সাধু-সন্ন্যাসীই প্রথমে এই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের বুঝিয়ে ওই পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, শুধুমাত্র অস্থায়ী শিবিরে থাকা সাধু-সন্ন্যাসীরাই নন, গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে শহরে আসা যে কোনও পুণ্যার্থী সংক্রমিত হলে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ব্যবস্থা রাখা আছে। কারও শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়লেই ওই অস্থায়ী চিকিৎসালয়ের চিকিৎসকেরা প্রয়োজনমতো তাঁকে হাসপাতাল অথবা সেফ হোমে রাখার ব্যবস্থা করবেন। এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল-সহ বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে পুণ্যার্থীদের জন্য পৃথক শয্যার ব্যবস্থা রাখা আছে। তা ছাড়া গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীদের জন্য দক্ষিণ শহরতলির কসবা থানা এলাকায় গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে ৩০০টি শয্যা বিশিষ্ট একটি সেফ হোমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে রয়েছেন চিকিৎসক এবং নার্সও। করোনা-রোগীর ওষুধ ও পথ্যের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের করোনা সংক্রান্ত সমস্ত বিধিনিষেধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গুরুত্ব সহকারে প্রত্যেক পুণ্যার্থীকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভিন্ রাজ্য থেকে পুণ্যার্থীরা সরাসরি গঙ্গাসাগরে আসছেন। যাত্রাপথে বিভিন্ন বাফার জ়োনে তাঁদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত নানা বাফার জ়োনে সেফ হোম ও সরকারি হাসপাতাল-সহ অস্থায়ী চিকিৎসালয়ে পুণ্যার্থীদের রাখার ব্যবস্থা করা আছে।’’