লোকহিত: পুলিশের ভ্যান জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছেন ওই যুবকেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
এ এক অন্য সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত!
নাখোদা মসজিদ লাগোয়া কলুটোলার বাসিন্দা জনা কয়েক যুবক গত ছ’মাস ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছেন করোনা-যোদ্ধা হিসেবে। কখনও দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিলি করছেন, কখনও আবার গলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বসত বাড়িকে জীবাণুমুক্ত করার কাজে ছুটে যাচ্ছেন। সবটাই সামলাচ্ছেন আট জন তরুণ তুর্কি। বাদ যাচ্ছে না পুলিশের গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার কাজও।
জোড়াসাঁকো থানার ওসি মুকুল ঘোষ বলছিলেন, ‘‘এ রকম উদ্যমী ও পরোপকারী যুবকদের দেখা কমই মেলে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ওঁদের মতো মানুষ ভীষণ প্রয়োজন।’’ শনিবার সকালে মেছুয়ার ফলপট্টি এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে বেরিয়েছিলেন ইরফান আলি তাজ, সাবির আহমেদ, আজিম হাফিজ, সাজ্জাদ আলমরা। জোড়াসাঁকো থানার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল একটি পুলিশ ভ্যান। সেটি চোখে পড়তেই সোজা গাড়ির ভিতরে ঢুকে জীবাণুমুক্ত করে নেমে এলেন তাঁরা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকর্মী তখন সহকর্মীর দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে বলছেন, ‘‘এটাই তো আমাদের দেশের আসল ছবি।’’
মধ্য কলকাতার বড়বাজার সংলগ্ন কলুটোলায় প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক থাকেন। গত মার্চ মাসের শেষে লকডাউন শুরুর সময় থেকে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের দু’বেলা খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন এলাকার ব্যবসায়ী ইরফান আলি তাজ। তাঁকে সাহায্য করছেন তাঁর বন্ধুরা।
জোড়াসাঁকোর বাসিন্দা রাম যাদব, হরিহর প্রসাদ, গিরিশ মোহান্তিরা অসুস্থতা ও বয়সজনিত কারণে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না। লকডাউনে এ রকম প্রায় একশো জনের পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন ওঁরা। জুন মাসে আবার ‘আনলক’ পর্ব শুরু হতেই বিহার, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরানোরও ব্যবস্থা করেন ওঁরা।
আবার করোনার প্রকোপ বাড়তেই বৌবাজার ও জোড়াসাঁকোর ঘিঞ্জি গলি থেকে শুরু করে মসজিদ, মন্দির, গুরুদ্বারে ঢুকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছেন ওঁরা। নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কাসেমি বললেন, ‘‘ধর্মীয় পরিচিতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশের কাজে লাগতে হবে। ইরফান আলি তাজরা নিঃস্বার্থ ভাবে যে কাজটা করে চলেছেন, দেশের এই কঠিন সময়ে যুবকদের প্রত্যেকেরই তা করা উচিত।’’
বড়বাজারের একটি গুরুদ্বারের সভাপতি অজিত সিংহ বলেন, ‘‘কলুটোলার ওই মুসলিম যুবকেরা গুরুদ্বারে ঢুকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করেছেন। এই দুঃসময়ে এই ছবি বড় পাওনা তো বটেই।’’
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই কঠিন সময়ে অনেকেই নিরলস ভাবে কোভিড-যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে চলেছেন। লালবাজারের তরফে তাঁদের আগামী দিনে পুরস্কৃত করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’