Coronavirus

‘স্নানবিলাসী’ শহরে স্নানেই খরচ দিনে ২৪ কোটি লিটার!

মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভূগর্ভস্থ জলের অবাধ ব্যবহারের ফলে দেশের অনেক জায়গায় এমনিই জলসঙ্কট রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৪৭
Share:

করুণ: চার দিকে ছড়ানো আবর্জনা। তার মধ্যেই জল ব্যবহার করছেন এক মহিলা। হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর উপরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

‘স্নানের সময় কমান।’ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে যখন দিনে বারবার হাত ধোয়ার প্রয়োজন হচ্ছে এবং তার জন্য দেশ জুড়ে বেড়ে গিয়েছে জলের ব্যবহার, তখন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে এই প্রচারই চালানো হচ্ছে।

Advertisement

মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভূগর্ভস্থ জলের অবাধ ব্যবহারের ফলে দেশের অনেক জায়গায় এমনিই জলসঙ্কট রয়েছে। তার উপরে গত বছরও দেশের ৪৫ শতাংশ এলাকা খরার কবলে ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বারবার হাত ধুতে হচ্ছে। তাই অদূর ভবিষ্যতে জলসঙ্কট এড়াতে এখনই অন্য খাতে বরাদ্দ জলের দৈনন্দিন ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘শুধু স্নানের সময় কমানোই নয়, জলের পুনর্ব্যবহারের জন্যও প্রচার চালানো হচ্ছে। যেমন কাপড় কাচা বা আনাজ ধোয়ার জল শৌচালয় পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। জল ফেলে না দিয়ে তার বিকল্প ব্যবহার করতে হবে।’’

‘ফাইভ মিনিট শাওয়ার’-এর কথা ‘অ্যাক্ট নাও ক্লাইমেট ক্যাম্পেন’-এ আগে থেকেই বলে এসেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। কারণ দেখা গিয়েছে, ‘জল সমৃদ্ধ’ বা ‘ওয়াটার রিচ’ দেশ বা শহরগুলির বাসিন্দারা গড়ে আট মিনিট ধরে স্নান করেন। আর ওই আট মিনিটে গড়ে ৭৫-৭৮ লিটার জল খরচ হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের জল সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের বহু জায়গার মানুষ এই বিলাসিতা দেখাতে পারেন না। কারণ, বিশ্বের সাড়ে ৭৮ কোটি মানুষের কাছে পানীয় জল সরবরাহের ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও নেই। কমপক্ষে ২০০ কোটি মানুষ তীব্র জলের অভাবের (হাই ওয়াটার স্ট্রেস) মধ্যে দিন গুজরান করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: মানছেন না করোনার সতর্কবার্তা, পরামর্শ এড়িয়েই ভিড় শহরের বাজারে

জল সরবরাহের মাপকাঠি অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) পৃথিবীকে চারটি ভাগে ভাগ করেছে। দিনে মাথা-পিছু পাঁচ লিটার জলপ্রাপ্তির এলাকা হল ‘জল সরবরাহ নেই’ (নো অ্যাকসেস), দৈনিক মাথা-পিছু ২০ লিটার জলপ্রাপ্তির এলাকা ‘সাধারণ জল সরবরাহ’ (বেসিক অ্যাকসেস), দৈনিক মাথা-পিছু ৫০ লিটার জলপ্রাপ্তির এলাকা ‘মাঝারি জল সরবরাহ’ (ইন্টারমিডিয়েট অ্যাকসেস) এবং দৈনিক মাথা-পিছু ১০০-২০০ লিটার জলপ্রাপ্তির এলাকাকে ‘সর্বোচ্চ জল সরবরাহ’ (অপটিম্যাল অ্যাকসেস) বলা হয়।

সেই হিসেবে গঙ্গার সৌজন্যে কলকাতা এখনও পর্যন্ত ‘জল সমৃদ্ধ’ বা ‘সর্বোচ্চ জল সরবরাহ’ এলাকার মধ্যেই পড়ে বলে জানাচ্ছেন গবেষকদের একাংশ। শহরের বেশির ভাগ অংশই অন্তত এই বিভাগের মধ্যে পড়ে। সে কারণেই বেসরকারি একাধিক সমীক্ষা দেখিয়েছে, এ শহরের সিংহভাগ বাসিন্দাই ‘স্নানবিলাসী’! কারণ, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে ‘দ্য সেন্ট্রাল পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন’-এর (সিপিএইচইইও) নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী, কলকাতার মতো মেট্রোপলিটন শহরে দিনে বিভিন্ন কাজের জন্য মাথা-পিছু ১৫০ লিটার জলের প্রয়োজন। সেই হিসেবে স্নানের জন্য দিল্লিতে প্রতিদিন মাথা-পিছু গড়ে ৪৭ লিটার, মুম্বইয়ে ৩৫ লিটার, হায়দরাবাদে ৩৮ লিটার এবং কানপুরের বাসিন্দারা ৪৩ লিটার জল খরচ করেন। আর এই শহরে শুধু স্নানের জন্যই রোজ মাথা-পিছু খরচ হয় প্রায় ৫৫ লিটার জল! অর্থাৎ, প্রতিদিন এর জন্য খরচ হয় (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ ধরে) গড়ে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ লিটার জল!

ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, স্নান ছাড়া এ শহরে অন্য খাতে জলখরচের গড় হিসেব হল, বাসনপত্র ধোয়ায় ২৪ লিটার, শৌচাগার পরিষ্কারে ২৪ লিটার, কাপড় কাচার জন্য ২১ লিটার, ঘর পরিষ্কারে ১৭ লিটার, পানীয় জল ৪ লিটার, রান্নার কাজে সাড়ে ৩ লিটার এবং অন্যান্য কাজে ২ লিটার। কলকাতা পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের যে সব জায়গায় জলের জোগান অফুরন্ত, সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশ আবার আগের দিনের ধরা জলে স্নান করতে চান না। সেই জল পুরোটা ফেলে দিয়ে নতুন করে জল ধরে স্নান করেন!’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর শুভাশিস দাস বলেন, ‘‘জলসঙ্কটের আঁচ এড়াতে এই মুহূর্তে সকলেরই হিসেব করে জল খরচ করা প্রয়োজন।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement