ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার প্রতিদিন ৫০ হাজার প্রতিষেধক দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, দেওয়া হচ্ছে দৈনিক ৩০ হাজার। অর্থাৎ, দিনে ২০ হাজার প্রতিষেধকের ঘাটতি নিয়ে তৃতীয় ঢেউয়ের প্রস্তুতিতে নামতে বাধ্য হচ্ছে পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না আসায় এই ঘাটতি। এ জন্য যে ফের বড় অঙ্কের মূল্য চোকাতে হতে পারে, এমন আশঙ্কা বাড়ছে সব মহলেই।
কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী ২১ জুন থেকে আঠারোর ঊর্ধ্বে সবার করোনার প্রতিষেধক পাওয়ার আশা আগেই দূর হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন যে আজ, সোমবার থেকে পঁয়তাল্লিশ বছরের বেশি বয়সিরাও ঠিক মতো প্রতিষেধক পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পুরসভার এক চিকিৎসক রবিবার বলেন, “রাত পর্যন্ত যা খবর, তাতে ৪৫-এর বেশি বয়সিরা সোমবার কোনও রকমে প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় পেলেও মঙ্গলবার থেকে কী হবে, কিছুই বলতে পারছি না।”
এ দিকে, কোভিডের আসন্ন তৃতীয় ঢেউয়ের আগে প্রতিষেধক পেতে মরিয়া সবাই। কিন্তু ১৮-৪৫ বয়ঃসীমার বেশির ভাগই এখনও তা পাননি। তৃতীয় ঢেউ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, শিশুর মায়েদের প্রতিষেধক দ্রুত দিতে হবে। এক চিকিৎসকের কথায়, “সে ক্ষেত্রে শিশুর মায়েদের বড় অংশ পড়ছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না এলে সেই কাজেও বাধা পড়বে।”
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বহু পরিবারে অভিভাবকেরা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় পেলেও তাঁদের সন্তানদের নেওয়া হয়নি। ফলে এ কথা বলা যাবে না যে গোটা পরিবার সুরক্ষা বলয়ে রয়েছে। কলকাতা পুরসভার এক চিকিৎসকের কথায়, “আমি নিজে প্রতিষেধক নিয়ে সুরক্ষিত আছি। কিন্তু সন্তানেরা প্রতিষেধক পায়নি। ফলে বাইরে থেকে যখন ঘরে ঢুকছি, তখন আমিই সন্তানের ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারি। একটি পরিবারে সবাই প্রতিষেধক না পেলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
কলকাতা পুর এলাকায় এখন দুশোর বেশি কেন্দ্র থেকে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পুরসভার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রথমার্ধে (সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা) পঁয়তাল্লিশ বছরের উর্ধ্বে দ্বিতীয় ডোজ় এবং দ্বিতীয়ার্ধে (দুপুর দুটো থেকে বিকেল চারটে) ওই একই বয়সিদের প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে। সুপার স্প্রেডার গ্রুপের সদস্যদের জন্য প্রতিটি বরোর মেগা সেন্টার ছাড়াও বাজারগুলিতে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সুপার স্প্রেডার গ্রুপের সদস্যদের পরিবারে আঠারোর ঊর্ধ্বে প্রতিষেধক দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পাশাপাশি কেন্দ্রের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গত ২১ জুন থেকে রোজ শহরের কেন্দ্রগুলিতে আঠারোর ঊর্ধ্বে প্রতিষেধক পাওয়ার বিষয়ে জানতে সব স্তরের মানুষ নিয়মিত ভিড় করছেন। তবে বেশি চাহিদা রয়েছে দ্বিতীয় ডোজ়ের। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডোজ় নেওয়ার জন্য মানুষের এই তাড়াহুড়ো।
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, “দিনে কলকাতা পুরসভায় পঞ্চাশ হাজার প্রতিষেধক দেওয়ার পরিকাঠামো আছে। কিন্তু দেওয়া যাচ্ছে প্রায় তিরিশ হাজার। অর্থাৎ, কলকাতায় রোজ কুড়ি হাজার প্রতিষেধকের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। শহরতলি থেকেও অনেকে প্রতিষেধক নিয়ে যাচ্ছেন। সেটাও বারণ করতে পারি না। আমাদের যাবতীয় পরিকাঠামো প্রস্তুত। কিন্তু কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না আসায় সমস্যা হচ্ছে।”