Coronavirus in Kolkata

সুরক্ষার সব ব্যবস্থা রেখেই খুলবে ধর্মস্থান

সকলেই জোর দিচ্ছেন সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলার উপরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০৩:২৪
Share:

সতর্কতা: খুলে দেওয়ার আগে জীবাণুনাশক ছড়ানো হচ্ছে নাখোদা মসজিদ (বাঁ দিকে) ও মৌলালির কাছে একটি গির্জায় (ডান দিকে)। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ভক্ত ও দর্শনার্থীরা তাঁদের ‘আপনজন’। কিন্তু করোনা একেবারেই ‘বহিরাগত’। আর তাই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের জায়গাকে মুক্ত রাখতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা করেছে শহরের অধিকাংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

সেই সুরক্ষা-বর্মে সজ্জিত হয়েই কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী আগামী ৮ জুন থেকে দরজা খুলে দিচ্ছে শহরের অধিকাংশ মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার ও গির্জা। কোথাও সাধারণের জন্য দরজা খোলার আগে গোটা প্রতিষ্ঠান জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। কোথাও আবার প্রবেশপথেই দর্শনার্থী বা ভক্তদের হাত পরিষ্কার করতে বসানো হচ্ছে জীবাণুনাশকের যন্ত্র। তবে সকলেই জোর দিচ্ছেন সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলার উপরে।

যেমন, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি বললেন, ‘‘করোনা ঠেকাতে যাবতীয় সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে মসজিদ খুলতে নোটিস জারি করে তা সারা রাজ্যের বিভিন্ন মসজিদে পাঠানো হয়েছে।’’ কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজার কথায়, ‘‘ধর্মস্থানগুলির বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সতর্কতা-বিধি আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছি।’’ কালীঘাট মন্দির জীবাণুমুক্ত করার সরকারি নির্দেশ এসে পৌঁছেছে মন্দির পরিচালন কমিটির কাছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: অসুস্থ ও শিশুদের প্রবেশে আপত্তি শপিং মল কর্তৃপক্ষের

সমস্ত রকমের দূরত্ব-বিধি মেনেই নাখোদা এবং ধর্মতলা ও টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদ খোলা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ওই মসজিদ কমিটিগুলির তরফে। নাখোদা মসজিদের তরফে নাসের ইব্রাহিম জানান, নমাজ চালু হলেও মসজিদের ওজুখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ ছাড়াও যাতে সকলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন, তা দেখতে নাখোদা মসজিদের গেটে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নমাজের সময়ে এক জনের থেকে অন্য জনের ব্যবধান যাতে অন্তত এক হাত হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা হবে বলে জানান নাসের।

একই ধরনের নিয়ম চালু করা হয়েছে ধর্মতলা ও টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদে। ওই দুই জায়গারই মোতোয়াল্লি আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘নমাজিদের বাড়ি থেকেই ওজু (হাত-পা-মুখ ধোয়া) করে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’

গির্জায় সাধারণত সকলেই জুতো পরে ঢোকেন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশিকায় জুতো খুলে ঢোকার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রের ওই নির্দেশে গুরুত্ব দিচ্ছেন আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা। তিনি বলেন, ‘‘এখন দশ জন লোকের জন্য হয়তো কোথাওই আলাদা জুতো রাখা বা পাহারা নিয়ে তত ভাবতে হবে না। তবে আমরাও চাই সকলে জুতো খুলে গির্জায় ঢুকুন। গির্জাগুলিকে সেই নির্দেশ দিয়েছি।’’

আবার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে ঢোকার সময়ে থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজ়ার। একই রকম সুরক্ষার বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে শহরের গুরুদ্বারগুলিতেও। যেমন, বেহালা গুরুদ্বারে পা দিয়ে চাপ দিলে স্যানিটাইজ়ারের কল থেকে তরল ঝরে পড়বে হাতে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ বা এসএসকেএম হাসপাতালের কাছের গুরুদ্বারও এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।

কালীঘাট মন্দিরের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেখানে কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কালীঘাট মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, ‘‘মন্দির জীবাণুমুক্ত করতে কী কী সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি দরকার, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর ভিতরে একসঙ্গে কত জন ঢুকতে পারবেন, তা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’’

এ দিন সব ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আন্তঃধর্ম সম্প্রীতি মঞ্চের তরফে বেহালা গুরুদ্বার, বৌবাজারের বো স্ট্রিটের বৌদ্ধ মন্দির, মৌলালির সন্ত টেরিজা গির্জা এবং টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদ জীবাণুমুক্ত করা হয়। উদ্যোক্তাদের তরফে সৎনাম সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘আরও অনেকে আমাদের অনুরোধ করেছেন। আরও কয়েকটি জায়গা জীবাণুমুক্ত করতে যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement