ছবি: সংগৃহীত
হুটার বাজিয়ে পথে আজকাল প্রায়ই ছুটতে দেখা যায় অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে। কখনও বাড়ি থেকে হাসপাতাল, কখনও হাসপাতাল থেকে রোগীকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া— শহরের কোভিড আক্রান্তদের নিখরচায় পরিষেবা দিতে এ ভাবেই দিনরাত ছুটে চলছে একটি বেসরকারি সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্স। কোভিড রোগীদের পরিষেবা দিতে বৃহত্তর কলকাতা শহরের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে রয়েছে এমন ৮৯টি অ্যাম্বুল্যান্স।
বেসরকারি কিছু অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। কোভিড আক্রান্তদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে শহরের মধ্যেই মাত্র তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠেছে। আর যথেচ্ছ দর হাঁকা সত্ত্বেও নিরুপায় হয়ে এমন দাবি মেনে নিতে হয়েছে অনেককেই।
তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনও কোভিড রোগী বাড়ি বা হাসপাতাল পৌঁছতে চাইলে সে ক্ষেত্রে তাঁকে নিখরচায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে ওই বেসরকারি সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্স। কেন্দ্রের জননী ও শিশুসুরক্ষা প্রকল্পের আওতাধীন এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাকে রাজ্য কোভিডের কাজে লাগিয়েছে। যার ফলে উপকৃত হচ্ছেন এ শহরের বহু কোভিড আক্রান্ত মানুষ।
আরও পড়ুন: কাজ গিয়েছে করোনায়, মাথায় হাত ডেকরেটরদের
দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থার এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান প্রশান্ত সাহা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পের অধীনে এ রাজ্যে তাঁদের পথ চলা শুরু হয়েছিল। তখন ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলির কাজ ছিল মূলত গ্রামবাংলায় প্রসূতি মায়েদের বিনা খরচে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। তা ছাড়া এক বছরেরও কম বয়সি অসুস্থ শিশুদের নিয়েও হাসপাতালে যাতায়াত করত ওই সব অ্যাম্বুল্যান্স। খাস কলকাতায় অবশ্য ওই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
প্রশান্তবাবু জানাচ্ছেন, কোভিডের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরেই রাজ্য সরকারের তরফে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর কথায়, “গত ১৪ মার্চ রাজারহাটে সিএনসিআই-কে করোনা কেন্দ্র ঘোষণার দিন আমাদের একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে সেই পরিষেবা শুরু হয়েছিল। আজ মোট ৮৯টি অ্যাম্বুল্যান্স শুধু বৃহত্তর কলকাতাতেই কোভিড রোগীদের নিয়ে যাতায়াত করছে।” এই পরিষেবার জন্য খরচের ৬০ শতাংশ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর বাকি ৪০ শতাংশ খরচ মেটাচ্ছে রাজ্য।
রাজ্যে এখন কোনও ব্যক্তির কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে তা স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সেল-এর কাছে চলে যাচ্ছে। এর পরে সেই দফতরই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রোগীর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এর পরে অবস্থা বুঝে কেউ বাড়িতে গৃহ-পর্যবেক্ষণে থেকে গিয়ে করোনার চিকিৎসা চালাচ্ছেন, কেউ আবার ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু যাঁরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেফ হোমে বা হাসপাতালে যেতে চাইছেন, তাঁদের সেখানে পৌঁছে দিতেই বাড়ির দোরগোড়ায় হাজির হয়ে যাচ্ছে নিখরচার এই অ্যাম্বুল্যান্স।
প্রশান্তবাবু জানিয়েছেন, সরাসরি ১০২-তে ফোন করলে তাঁদের পরিষেবা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু তা শুধু প্রসূতি মা এবং শিশুদের জন্য। সরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এলে তবেই কোনও কোভিড আক্রান্ত তাঁদের পরিষেবা পেতে পারবেন। এই মুহূর্তে সারা রাজ্যে তাঁদের মোট ৮০৪টি অ্যাম্বুল্যান্স কাজ করছে, যার মধ্যে ৪৯০টি ছুটছে শুধু কোভিড রোগীদের জন্যই। এর মধ্যে খাস কলকাতার রাজপথে চলছে ৮৯টি অ্যাম্বুল্যান্স, বাকিগুলি জেলায়। এই পরিষেবা দেওয়ার জন্য রয়েছেন মোট ২৯০০ জন কর্মী।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)