সুনসান পাড়ায় মৃৎশিল্পীদের স্টুডিয়ো দেখতে প্রায়ই ভিড় জমান বিদেশি পর্যটকেরা। কিন্তু করোনা-আতঙ্কের জেরে এখন সেই অতিথিদের দেখলেই আঁতকে উঠছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। ভয় এতটাই যে, বিদেশিরা যাতে কুমোরপাড়ায় না-আসেন, সে জন্য পোস্টার পড়েছে কুমোরটুলিতে।
দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বিদেশিদের গতিবিধির উপরে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে কুমোরটুলিতে বিদেশি দর্শকদের আনাগোনা আতঙ্ক বাড়িয়েছে শিল্পীদের মধ্যে। তবে পোস্টার টাঙিয়েও তেমন কাজ না হওয়ায় শিল্পীরা সরকারি হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি বিদেশি এক দম্পতিকে নিয়ে কুমোরটুলির স্টুডিয়ো ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন এক গাইড। বিদেশি আগন্তুকদের দেখেই তাঁদের গাইডের কাছে কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু পাল অনুরোধ করেন, ‘‘করোনার কারণে বিদেশিদের আসা-যাওয়ার ব্যাপারে এখন সরকারি বিধিনিষেধ রয়েছে। দয়া করে ওঁদের নিয়ে চলে যান।’’ চলে না গিয়ে অবশ্য গাইড তাঁকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। বাবুর অভিযোগ, ‘‘বিদেশিদের নিয়ে গাইডরা কুমোরটুলিতে ঢোকার সময়েই আমরা বারণ করছি। কিন্তু গাইডরা আমাদের কথা শুনছেন না।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘মাস্ক না পরেই বিদেশিরা আসছেন কুমোরটুলিতে। তাঁরা কোন দেশ থেকে আসছেন, তা-ও জানি না। তাঁরা যে কোনও করোনা-আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসেননি, তার প্রমাণ কোথায়?’’
গত রবিবার বাসে করে বিদেশি পর্যটকেরা কুমোরটুলিতে যান। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘‘রবিবার প্রায় দেড়শো জন বিদেশি এসেছিলেন। সোমবারও জনা চল্লিশ বিদেশি ঘুরে গিয়েছেন। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতির জন্য আমরা চাইছি যাতে আপাতত কোনও বিদেশিই না আসেন।’’ মঙ্গলবারও কুমোরটুলিতে পৌঁছে যান পাঁচ বিদেশ পর্যটক। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য তাঁদের গাইডকে অনুরোধ করা হলে তাঁরা কুমোরটুলি ছেড়ে চলে যান।
মৃৎশিল্পী বাবু বলছেন, ‘‘জোর করে তো কারও পথ আটকাতে পারি না! তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে কুমোরটুলিতে বিদেশিদের ঢোকা বন্ধ করা হোক।’’ করোনা-আতঙ্কে আপাতত তাই বিদেশিদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন অধিকাংশ শিল্পী। এ নিয়ে বিদেশি পর্যটক বা তাঁদের গাইডদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
কুমোরটুলিতে বিদেশিদের আনাগোনায় চিন্তিত এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তিনি বলেন, ‘‘কুমোরটুলিতে বিদেশিরা যাতে না ঢুকতে পারেন, সে জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। মৃৎশিল্পীদেরও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। রাজ্যে বিদেশিদের নিয়ে যেখানে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে, সেখানে কুমোরটুলি ব্যতিক্রম হবে কেন?’’
অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমোরটুলিতে একটি পুলিশ কিয়স্ক বসানোর দাবি জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। যা শুনে ডিসি (উত্তর) জয়িতা বসু বলেন, ‘‘কুমোরটুলি পাড়ায় বিদেশিদের আনাগোনার ব্যাপারে পুলিশ নজর রাখবে।’’