প্রার্থনা: মুম্বই রওনা হওয়ার আগে মাস্ক-দস্তানা পরে পার্ক সার্কাস জমায়েত চত্বরে আসমত জামিল। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
মানবিকতার দাবিতেই পার্ক সার্কাসের অবস্থান শুরু হয়েছিল। মানবিকতার দাবির থেকে বড় কিছু হতে পারে না। আর তাই এ দেশে ক্রমশ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পটভূমিতে মানবিকতার স্বার্থেই তাঁরা পরের সিদ্ধান্ত নেবেন। সোমবার সন্ধ্যায় এ কথা বলেই পার্ক সার্কাসের অবস্থান থেকে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সর্বতো ভাবে সহযোগিতার কথা বললেন প্রতিবাদীরা।
এ দিন পার্ক সার্কাসের অবস্থানের ৭০ দিন পূর্ণ হল। আন্দোলনের আহ্বায়ক আসমত জামিল এ দিন বলেন, ‘‘এখনও যাঁরা অবস্থানে বসবেন, তাঁরা অবশ্যই ঘনঘন হাতমুখ ধুতে থাকুন। মাস্ক এবং দরকারে হাতে দস্তানা পরে এসে বসুন।’’ তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরঞ্জামের কিছুটা অভাব রয়েছে পার্ক সার্কাসের মাঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন এখন কিছু দিন রাজ্যে বড় জমায়েত এড়াতেও বলছেন। আন্দোলনে সহমর্মীদের প্রতি আসমতের অনুরোধ, ‘‘দয়া করে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষই এই আন্দোলনকে সাহায্য করেছেন। কেউ কেউ শীতে কম্বলও জুগিয়েছেন। দরকারে তাঁরা মাস্ক, হাত ধোয়ার তরল সাবান ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করুন। এটা মানবিকতার লড়াই, মানবিকতার দাবিই এখানে শেষ কথা।’’
ধর্মের নামে বিভাজন করে রাষ্ট্রশক্তি যদি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চাপাতে চায়, তাহলে তার বিরোধিতা করার মধ্যে বীরত্ব রয়েছে। কিন্তু নিজের শরীরপাত করে স্বাস্থ্যবিধি অস্বীকার করা কোনও যে কাজের কথা নয়, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন আসমত।
একটি দুঃসংবাদও এ দিন শুনিয়েছেন তিনি। বছরখানেক আগে ক্যানসারের চিকিৎসায় সেরে উঠেছিলেন আসমত। তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনও হয়েছিল। ‘‘আমার ক্যানসার আবার ফিরে এসেছে। এ বার চিকিৎসার জন্য মুম্বইয়ে যেতে হবে। তাই নিরুপায় হয়েই কিছু দিন পার্ক সার্কাসের মাঠ থেকে দূরে সরে থাকতে হচ্ছে।’’— রুদ্ধ কণ্ঠে এ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আসমত। আজ, মঙ্গলবার সকালের ট্রেনেই তিনি মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
এর আগে পার্ক সার্কাসের মাঠে শীতের রাতে নিউমোনিয়া হয়ে মারা গিয়েছিলেন এক প্রৌঢ়া। সামিদা বিবি বলে আর এক জন বৃদ্ধাও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। প্রতিবাদী কলকাতার আবেগ তাঁদের শহিদের মর্যাদা দিয়েছে। হৃদ্রোগের অসুখে ১০ দিন হাসপাতালবাসের পরে ছাড়া পেয়েই এক প্রৌঢ়া ফিরে এসেছিলেন পার্ক সার্কাসের মাঠে। দিল্লির শাহিন বাগের আদলে অবস্থান শুরুর পরে এ ভাবেই গত ৭০ দিনে পার্ক সার্কাসের এই অবস্থান রাজ্যের নাগরিক সমাজের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
আন্দোলনের এই পর্যায়ে পৌঁছে তাই লড়াইয়ের জমি ছাড়তে চাইছেন না বেশির ভাগ প্রতিবাদীই। তবে আন্দোলনকারীদের মধ্যেই কোনও কোনও মহলের অভিমত, এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পটভূমিতে জমায়েতের ভিড় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে, পর্যাপ্ত সুরক্ষাবিধি মেনে কয়েক জন মাত্র প্রতিনিধি এই অবস্থানে বসলেন। অবস্থানকারীদের বেশির ভাগই আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাইলেও কারও কারও অভিমত, সকলের সুরক্ষার কথা ভেবে কিছু দিনের জন্য অবস্থান তুলে নেওয়া পরাজয় নয়। পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদীদের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আসমতের আর্জি, ‘‘আপনি মুসলিম বোনদের দুঃখের কথা বলে থাকেন, তাই এখনই
সিএএ-র মতো কালা কানুন হটিয়ে দিন। সেটাই উচিত কাজ হবে।’’