ফাইল চিত্র
সৎকার করতে একের পর এক দেহ আসতে থাকে। সেই সঙ্গে আসতে থাকেন মৃতের পরিজন, বন্ধু-বান্ধব। ভিড়ে ঠাসা নিমতলা শ্মশানঘাটের সেই ছবিটা সোমবার রাতের পর থেকেই বদলে গেল। রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকার ঘিরে গোলমালের পরেই এই পরিবর্তন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লকডাউন। সব মিলিয়ে সোমবার রাত থেকে নিমতলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন এলাকা রীতিমতো থমথমে। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। শ্মশানের বিপরীতে থাকা সব দোকান বন্ধ।
করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকার করতে গেলে প্রথমে প্রবল বাধার সামনে পড়তে হয় পুলিশকে। পরে পুলিশি প্রহরায় রাত পৌনে ১২টা নাগাদ পুরনো শ্মশানের ভিআইপি চুল্লিতে ওই ব্যক্তির দেহ ঢোকানো হয়। দাহকার্য শেষ হলে রাত ১টা থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা ধরে ওই বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশাপাশি পুরো ভবনটি জীবাণুমুক্ত করা হয় বলে পুরসভা জানিয়েছে।
সোমবারের গোলমালে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। সকলেই নিমতলা ঘাট স্ট্রিট বস্তির বাসিন্দা। যদিও বস্তির এক যুবকের দাবি, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির দেহ আনা হচ্ছে শুনে বাইরে থেকে ৫০-৬০ জনের দল আসে। তারা গোলমাল করে পালিয়ে যায়। পুলিশ তাদের কাউকে না পেয়ে বস্তির লোকজনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। ওই যুবকের কথায়, ‘‘আমরা কেন গোলমাল করব? কেউ মারা গেলে, তাঁর তো সৎকার করতেই হবে।’’
গ্রেফতার হওয়া যুবকদের মধ্যে রয়েছে ভূতনাথ মন্দির সংলগ্ন এক বস্তির বাসিন্দা কমল সাঁতরা। তাঁর দাদা সুকুমার সাঁতরা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘করোনায় মৃত ব্যক্তির দেহ নিয়ে আসা হয়েছে এবং এই নিয়ে গোলমাল হচ্ছে শুনে তা দেখতে বেরিয়ে গিয়েছিল ভাই। তখনই পুলিশ ওকে ধরে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দেহ এলাকায় পোড়ানো হয়েছে শুনে আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছেন অনেকে। তাঁদের আশঙ্কা, ওই ভাইরাস এ বার তাঁদের শরীরে ঢুকবে। দুর্গাচরণ মিত্র লেনের বাসিন্দা রতন দলুই বাড়ি পাহারা দিতে থেকে গেলেও এই আতঙ্কে দুই সন্তানকে নিয়ে দাদা-বৌদি অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যদিও এই আশঙ্কা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এত উচ্চ তাপমাত্রায় কোনও ভাইরাসই বাঁচে না।’’