প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণামূলক আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে মুখ ও নাকের সুরক্ষার কথা। একটি মাত্র রাইবোনিউক্লেয়িক অ্যাসিড (আরএনএ) যুক্ত এই ভাইরাস শুধুই মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকতে পারে, বলা হয়েছে তা-ও। কিন্তু চোখের সুরক্ষা নিয়ে সে ভাবে বলা হয়নি কোনও কথা। অথচ চোখ, নাক এবং মুখ— এই তিন জায়গাতেই রয়েছে মিউকাস মেমব্রেন। সুতরাং শুধু মুখ ও নাক নয়, সুরক্ষা কবচ থাক চোখেও, এমনটাই জানাচ্ছে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথ্যালমোলজি (এএও)।
এএও-এর তরফে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কোনও রোগী জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ নিয়ে এলে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নাক এবং মুখের পাশাপাশি চোখের সুরক্ষা নিয়ে তবেই চিকিৎসা শুরু করুন। এএও-র মুখপাত্র সোনাল তুলি বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চোখ নিয়ে সতর্ক থাকার কথাও মনে রাখতে হবে। কন্ট্যাক্ট লেন্স পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। চোখে বারবার হাত দেওয়া বা চোখ ঘষার অভ্যাস ছাড়তে হবে।’’
গত ৪২ বছর ধরে গ্লকোমা নিয়ে গবেষণা করছে সান ফ্রান্সিসকোর গ্লকোমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন। ওই সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিযুক্ত ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখের সুরক্ষায় বিশেষ চশমা পরতে হবে। কন্ট্যাক্ট লেন্সের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং চোখে হাত না-দেওয়ার কথাও বলছে ওই সংস্থা। তবে এর উল্টো মতও পোষণ করেন বহু চিকিৎসক, জানাচ্ছেন চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “চোখ দিয়ে করোনাভাইরাস প্রবেশ করতে পারে, এমন তথ্য জানা নেই।”
এই সতর্কবার্তাকে সমর্থন করছেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রাক্তন প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত। তিনি জানান, চোখের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। কিন্তু বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসায় যুক্ত এবং যাঁরা রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের এটা মনে রাখা দরকার। তাঁর কথায়, “ডাক্তার এবং নার্সরা চোখের সুরক্ষায় বিশেষ ধরনের চশমা ও রাস্তায় বেরোনোর আগে সকলেই চোখের দু’পাশ ঢাকা সানগ্লাস পরুন। অন্তত যে কোনও চশমা বা সানগ্লাস পরলেও হবে। তাতে চোখে হাত দেওয়ার প্রবণতা ঠেকানো যাবে।”
একই কথা বলছেন চক্ষু চিকিৎসক অভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “চোখের বিশেষ চারিত্রিক গঠনের জন্য হয়তো সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে ড্রপলেট সরাসরি চোখে ঢুকবে না। কারণ, বাইরের কিছু ঢোকার মুহূর্তে চোখ অক্ষিপল্লব বন্ধ করে দেয়। তবে হাতে ভাইরাস লেগে থাকলে চোখ ঘষার মাধ্যমে তা শরীরে ঢুকতে পারে।”