Covid Death

কোভিডে কোথায় মৃত্যু বেশি? চিহ্নিত হচ্ছে শ্মশান, কবরস্থান

রাজ্য প্রশাসনের একাংশের দাবি, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসতে দেখার আগেই কোভিডে মৃতদের সম্মানজনক সৎকারের জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৬:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা অতিমারি শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবার খামতিকে বেআব্রু করেছে তা নয়। এই অতিমারি, সংক্রমণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সৎকারের খামতিকেও প্রকাশ্যে এনেছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে গঙ্গায় ভাসানো মৃতদেহের ঘটনা সেই খামতিরই একটি অংশ মাত্র। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কখনও সামনে এসেছে পর্যাপ্ত সংখ্যক বৈদ্যুতিক চুল্লির অভাব, কখনও শববাহী গাড়ির অভাব, কখনও আবার অন্য কোনও সমস্যা। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও।

Advertisement

যদিও রাজ্য প্রশাসনের একাংশের দাবি, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসতে দেখার আগেই কোভিডে মৃতদের সম্মানজনক সৎকারের জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে। কোন পুর এলাকার কোন শ্মশান এবং কবরস্থানে কোভিড মৃতের চাপ বেশি, তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, কোভিডে মৃত্যুর চাপ সামলাতে রাজ্যের সমস্ত পুর এলাকার শ্মশান, কবরস্থানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।—‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’। ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত এলাকায় মৃতের চাপ সব থেকে বেশি। তাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই শ্মশান বা কবরস্থানের পরিকাঠামো বাড়ানোয় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী শ্মশান, কবরস্থানের সম্প্রসারণের প্রস্তাবও পুরসভাগুলিকে পাঠাতে বলা হয়েছে।’’

দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা, হুগলি, দুর্গাপুর-সহ একাধিক পুর এলাকার শ্মশান, কবরস্থানকে ইতিমধ্যেই কোভিড মৃতের সংখ্যার নিরিখে ‘এ’ এবং ‘বি’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে পুরোহিত, ইমাম, ডোম নিয়োগের পাশাপাশি চুল্লির সংখ্যা বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কোভিড মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে পর্যাপ্ত চুল্লি নেই। সে ক্ষেত্রে সংলগ্ন শ্মশানের চু্ল্লি কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তার বিস্তারিত রূপরেখা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

তবে শুধু চুল্লি বা কবরস্থানের সমস্যাই নয়। সমস্যা রয়েছে পর্যাপ্ত শববাহী গাড়ি নিয়েও। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শববাহী গাড়িও যে সামগ্রিক পরিকাঠামোর একটা অঙ্গ, সেটা অতিমারির আগে বোঝা যায়নি। তথ্য বলছে, বেশির ভাগ জায়গাতেই শববাহী গাড়ি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে কোভিডে মৃতের হার ঊর্ধ্বমুখী হতেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শববাহী গাড়ির অভাব দেখা দিয়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য শববাহী গাড়ি মেরামতি করে ফের চলাচলযোগ্য করার জন্য পুরসভা, পুরনিগমগুলিকে ‘স্পট টেন্ডারিং’-এর ক্ষমতা দিয়েছে প্রশাসন। বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজন মতো শববাহী গাড়ি ভাড়া করার কথাও বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য করবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘শববাহী গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে রাজ্যের সব পুরসভাকে।’’

যদিও কোভিডে মৃতদের পরিবারের একাংশের অভিযোগ, এ সব নির্দেশ অনেক ক্ষেত্রেই খাতায়কলমে থেকে গিয়েছে। বাস্তবে তার অধিকাংশই কার্যকর হয়নি। ফলে এখনও অনেক জায়গাতেই কোভিডে মৃত্যুর পরে সৎকার শেষ হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে। যে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আসল সমস্যা অনেক গভীরে। করোনা অতিমারি সার্বিক পরিকাঠামোর ছোটখাটো ত্রুটি, যা এত দিন উপেক্ষা করা হত, তা প্রকাশ্যে এনেছে মাত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement