দীপায়ন পাল
করোনা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরিষেবা সম্পর্কিত তথ্য ও ফোন নম্বরের তালিকা একত্রিত করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন এক ছাত্র। আদতে হুগলির ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা ওই তরুণের নাম দীপায়ন পাল। তাঁর ওয়েবসাইটের নাম ‘কোভিড এড ইন্ডিয়া’। হাসপাতাল, অক্সিজেন, অ্যাম্বুল্যান্স, প্লাজ়মা ও রক্তদাতা, বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া-সহ বিভিন্ন পরিষেবার বেশ কিছু যোগাযোগের নম্বর পাওয়া যাবে এই সাইটে।
দিল্লির হংসরাজ কলেজের ছাত্র দীপায়ন বর্তমানে গাঁধীনগর আইআইটি-তে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ছেন। সম্পূর্ণ একার চেষ্টায় ওই ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন তিনি। কলকাতা ছাড়াও পুণে, মুম্বই, দিল্লি ও চেন্নাইয়ের মতো ১২টি শহরের এমন বেশ কিছু পরিষেবার তালিকা পাওয়া যাবে তাঁর তৈরি করা ওই সাইটে। মূলত সমাজমাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্র থেকেই একত্রিত করা হয়েছে ফোন নম্বরগুলি। সাইটে দেওয়ার আগে নম্বরগুলি যাচাইও করা হয়েছে বলে জানান দীপায়ন।
বিভিন্ন হাসপাতালে কোথায় কত শয্যা রয়েছে, সারা দেশে এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কত— সেই সব তথ্যও নিয়মিত ভাবে দেওয়া হচ্ছে ওই ওয়েবসাইটে। দীপায়ন জানান, অন্যান্য রাজ্যেরও তথ্য একত্রিত করার চেষ্টা করছেন তিনি। সারা দেশের জন্য হেল্পলাইন নম্বরের একটি সামগ্রিক তালিকা তৈরি করতে চান তিনি। একা হাতে পুরো কাজটা করা বেশ কঠিন। তা সত্ত্বেও আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সাহায্য করাই এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরান্ডা হাউজ় কোভিড হেল্প ডেস্কের সঙ্গে ‘কোভিড এড ইন্ডিয়া’ ওয়েবসাইটটির যৌথ উদ্যোগও স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান দীপায়ন। মিরান্ডা হাউজ় মূলত দিল্লির এমন বিভিন্ন রকম পরিষেবার যোগাযোগের তথ্য একত্রিত করছে। তাদের সহযোগিতায় নিজের ওয়েবসাইটে দিল্লির তথ্য আপডেট করছেন দীপায়ন। গত মাসের শেষের দিকে শুরু হয়েছিল এই ওয়েবসাইট। সারা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেরও বিভিন্ন জেলার তথ্য এবং যোগাযোগের নম্বর ইতিমধ্যেই আলাদা করে নথিভুক্ত করে ফেলেছেন তিনি। কলকাতার পাশাপাশি হুগলি, বর্ধমান, শিলিগুড়িতেও পৌঁছে গিয়েছে ‘কোভিড এড ইন্ডিয়া’। চলছে অন্য সমস্ত জেলার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার কাজও।
কী ভাবে মাথায় এল এমন ওয়েবসাইট তৈরির ভাবনা? দীপায়নের কথায়, ‘‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বহু মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। এমন কোনও একটি জায়গা ছিল না, যেখানে সমস্ত রকমের যোগাযোগের তথ্য একত্রে পাওয়া যাচ্ছে। চারপাশে বহু মানুষকে এই সমস্যায় পড়তে দেখেই সব তথ্য একত্রিত করে একটি ওয়েবসাইট তৈরির কথা মাথায় আসে। এই কঠিন সময়ে যদি এমন ইতিবাচক পদক্ষেপ করা যায়, সেটাও অনেক!’’ ব্যান্ডেলের ডন বস্কো স্কুলের প্রাক্তনী দীপায়ন স্কুলে পড়ার সময়েই ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শিখেছিলেন। তাই নিজের ওয়েবসাইট নিজেই সাজিয়েছেন তিনি।
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছে দীপায়নের এই ওয়েবসাইটের খবর। তিনি জানান, লন্ডন, আমেরিকার মতো নানা জায়গা থেকে বহু মানুষ যোগাযোগ করছেন তাঁর সঙ্গে। তাঁদের মা-বাবা বা পরিজনেরা হয়তো থাকেন কলকাতায়। তাঁরা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ায় অক্সিজেন বা অন্যান্য পরিষেবার প্রয়োজন পড়লে তাঁদেরও সাধ্যমতো সাহায্য করছেন দীপায়ন।