প্রস্তুতি: উড়ান পরিষেবা ফের চালু হওয়ার আগে বসার জায়গায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা। শনিবার, কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
লকডাউনের জেরে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে দ্বিতীয় দফায় যে উদ্ধারকারী বিমানগুলি দেশে ফিরছে, তার মধ্যে একাধিক বিমান আসতে পারে কলকাতাতেও। কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রক সূত্রে প্রাথমিক ভাবে তেমনটাই জানা গিয়েছে। এ দিকে, আগামী সপ্তাহে ভারতের অভ্যন্তরীণ উড়ান পরিষেবা চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেই উড়ান সূচিতে কলকাতার নামও আছে।
কলকাতায় ফেরার উড়ান না দেওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিদেশে আটকে থাকা এ রাজ্যের বাসিন্দারা। বিদেশ এবং বিমান মন্ত্রকের টুইটারে ক্রমাগত অভিযোগ আসতে শুরু করে। এ ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও সংবাদমাধ্যমের চাপও বাড়তে থাকে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগও ওঠে। এত চাপের মুখে পড়ে এ বার কলকাতায় উড়ান নিয়ে আসার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র।
শনিবার বিমান মন্ত্রক জানিয়েছে, কাল, ১৮ মে ঢাকা থেকে কলকাতায় ১৬০ জনকে উড়িয়ে আনা হবে। যদিও ঢাকায় আটকে পড়া প্রায় দু’হাজার রাজ্যবাসীর তুলনায় সংখ্যাটি নগণ্য। বিমান মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ ছাড়াও দ্বিতীয় দফায় বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে কলকাতায় আরও কিছু উড়ান আসতে পারে। তবে ঠিক কতগুলো উড়ান কোন কোন দেশ থেকে আসবে, তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। জানানো হয়েছে, বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করে এই উদ্ধারকারী উড়ানের সূচি ঠিক করা হবে।
‘‘ বিভিন্ন দেশ থেকে যাঁরা ফিরবেন, তাঁদের জন্য প্রস্তুতি
নিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়রান্টিনে থাকতে হবে তাঁদের। সেই মতো ব্যবস্থা হয়েছে। সরকারি কেন্দ্রে নিখরচায় থাকা যাবে। আবার বিভিন্ন তালিকাভুক্ত হোটেলেও খরচ করে থাকতে পারবেন বিদেশ ফেরতরা। কোন হোটেলে কত খরচ পড়বে এবং সরকারি কেন্দ্রের কী ব্যবস্থা, তার বিস্তারিত কেন্দ্রকে জানিয়েছে
রাজ্য। ১৮ তারিখ ১৬০ জনকে নিয়ে প্রথম বিমান আসবে বাংলাদেশ থেকে। বিমানবন্দর থেকে সরকারি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সরকারি বাস থাকবে। হোটেলে যাঁরা যাবেন, তাঁদের জন্য থাকবে অ্যাপ ক্যাব। পরে বিদেশ থেকে আরও বিমান আসবে ধাপে ধাপে।’’
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়
(স্বরাষ্ট্রসচিব)
ঢাকায় আটকে পড়া শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, ১৮ মে একটি উড়ান ঢাকা-কলকাতা রুটে চালানোর পরে আবার কবে ওই রুটে উড়ান চলবে, তার স্থিরতা নেই। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কী করে দেশে ফিরবেন, সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নেই নতুন আক্রান্ত, রেড থেকে গ্রিন জ়োনে বেলগাছিয়া বস্তি
আরও পড়ুন: ফুলমিষ্টিতে স্পর্শ-যোগ, মন্দির নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন
এই সব প্রশ্নের কোনও নির্দিষ্ট জবাবই অবশ্য বিমান মন্ত্রকের কাছে নেই। মন্ত্রকের মুখপাত্র এ দিন জানান, কোন দেশ থেকে ভারতের কোন শহরে কত জনকে ফিরিয়ে আনা হবে, তা ঠিক করছে বিদেশ মন্ত্রক।
সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র টুইট করে জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩৭০০ জন বাসিন্দা ফিরতে চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও রাজ্যের হিসেবে সংখ্যাটি দশ হাজারের কাছাকাছি।
প্রথম দফায় ৭ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত যে ৬৪টি উড়ানে প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফেরানো হয়েছে, সেই সূচিতে দিল্লি, মুম্বই-সহ প্রায় ১৫টি শহরের নাম থাকলেও কলকাতার নাম ছিল না। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। কেন্দ্র জানায়, বিদেশ থেকে ফেরার পরে প্রত্যেক নাগরিককে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই ব্যবস্থা করতে পারেনি বলেই উড়ান দেওয়া হয়নি।
বিমান মন্ত্রকের দাবি, রাজ্য সরকার সম্প্রতি সেই আইসোলেশনের ব্যবস্থা করে কেন্দ্রকে জানানোর মাঝেই দ্বিতীয় দফার উদ্ধারকারী উড়ানের সূচি তৈরি করে ফেলা হয়। ফলে, সেখানেও কলকাতার নাম ছিল না। এর পরেই শুরু হয় অভিযোগ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ এনে বিদেশ থেকে টুইট করতে শুরু করেন আটকে পড়া এ রাজ্যের বাসিন্দারা। তার পরেই এ দিন ঢাকা থেকে কলকাতায় উদ্ধারকারী উড়ান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।