Coronavirus Lockdown

বিনামূল্যে গান শোনাটাই মানুষের অভ্যাস হয়ে যাবে না তো?

মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ আগামী বেশ কিছু দিনের জন্য মিলবে না। আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি হবে তো বটেই, তবে আমরা অনেকেই কিছু দিন চালিয়ে নেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছি।

Advertisement

লোপামুদ্রা মিত্র

সঙ্গীতশিল্পী শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:০০
Share:

ছবি: পিটিআই।

মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে সমস্ত শো বাতিল হয়ে গেছে। অথচ এই সময়টায় কত অনুষ্ঠান হয়। ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। তার পর পরিস্থিতি বুঝে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে। সুযোগ হবে বাইরে বেরোনোর। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো খুলে দেওয়া হবে সবার শেষে, যখন বিপদ এ ভাবে ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলবে না।

Advertisement

মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ আগামী বেশ কিছু দিনের জন্য মিলবে না। আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি হবে তো বটেই, তবে আমরা অনেকেই কিছু দিন চালিয়ে নেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছি। যন্ত্রশিল্পী যাঁরা রয়েছেন, মঞ্চে শব্দ প্রক্ষেপণের কাজ যাঁরা করেন, নিয়মিত অনুষ্ঠানই তাঁদের রোজগারের উৎস। তাঁদের অনেকেই খুব কষ্টে আছেন। ওঁদের কথাই ভীষণ ভাবে মনে হচ্ছে এই সময়ে। এ ভাবে কত দিন তাঁরা কাটাতে পারবেন, জানি না। তাই আমরা যাঁরা রয়েছি, তাঁদেরই বিষয়টা ভাবতে হবে। অন্তত নিজের ঘনিষ্ঠ যে ক’জন রয়েছেন, তাঁদের কী ভাবে সাহায্য করা যায়, দেখা দরকার। এত হিসেব করে কখনও চ‌লিনি। কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে কারণ সামনের রাস্তা অনিশ্চয়তায় ভরা।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন সংক্রমণ ৮২৬ জনের, আক্রান্ত বেড়ে ১২৭৫৯, মৃত ৪২০

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু ৭ থেকে বেড়ে হল ১০, সক্রিয় রোগী ১৪৪

এই সময়ে মনোবল ধরে রাখাটাও তাই খুব জরুরি। আমি এমনিতে খুব ইতিবাচক মনের মানুষ। নানা অসুবিধার মধ্যেও তাই ভাল একটা দিক মাথায় আসছে। অন্য সময়ে হাজার কাজের ব্যস্ততার মধ্যে রেওয়াজের সময় কম পাই। এখন কিন্তু রেওয়াজটা মন দিয়ে করতে পারছি। এ ছাড়া, অন্যদের গান শুনছি। গান নিয়ে কে কী ভাবছেন, সেগুলো জানাও খুব দরকার। পরে কী গাইব, সেটাও ঠিক করে রাখার সময়টা এখন পাচ্ছি।

আমিও অন্য অনেক শিল্পীর মতোই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে গান গাইছি। নিজের শিল্পীমনের ভাল লাগার তাগিদ থেকে তো বটেই, অন্যদের শোনানোর জন্যও এটা করছি। তবে তার সঙ্গে একটা ভয়ও হচ্ছে। হয়তো এখনই এটা বললে ভাল শোনাবে না। তবু বলতে হবে। কারণ এর সঙ্গেও প্রচুর মানুষের জীবিকা জড়িয়ে। এখন লাইভ করতে ভাল লাগছে। মানুষও প্রশংসা করছেন। কিন্তু বিনামূল্যে গান শোনাটাই মানুষের অভ্যাস হয়ে যাবে না তো? পেশাদার শিল্পীর শ্রমের একটা দাম রয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও অনেক সময় সেই মূল্যটুকু জোটে না। অনেক ছেলেমেয়েরা রয়েছে যারা ফ্রিল্যান্স করে। আমার পরিচিত একটি ছেলে কিছু দিন আগে বিয়ে করেছে। ঋণ নিয়ে শব্দ প্রক্ষেপণের যন্ত্রপাতি কিনেছে। এই ছেলেটির মতোই অনেকের যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে করোনা সংক্রমণের জেরে। এই জরুরি পরিস্থিতিতে গানের সঙ্গে যুক্ত এই ধরনের মানুষগুলো কী ভাবে বাঁচছেন, সেটা কি কেউ ভাবছে?

সংক্রমণের ভয়, আর্থিক অনিশ্চয়তার ভয় নিয়ে ঘরে রয়েছি সবাই। আশঙ্কা হয়, সামনের দিন হয়তো আরও খারাপ আসছে। কত দিনে সব স্বাভাবিক হবে তারই অপেক্ষা এখন। আমি সব সময়ে ভেবেছি, আজ বেঁচে নিই। কালকের কথা কাল ভাবব। আগের মত করে আর চলতে পারব কি? জানি না। বাধ্য হয়েই ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হচ্ছে এখন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement