Bank

কোথায় রেলকর্মী! ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ৩৮ লাখের ব্যাঙ্ক ঋণ

তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা দেখেন আবেদনকারী কস্মিনকালে কখনও পূর্ব রেলে চাকরি করেননি। বজবজ স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নামে কোনও রেলকর্মী বা ঠিকাকর্মী নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:১৪
Share:

গ্রেফতারের পরে দুই অভিষুক্ত ব্যাঙ্ক জালিয়াত। —নিজস্ব চিত্র।

গৃহ ঋণের আবেদন জানানোর সময় আবেদনকারী নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন পূর্ব রেলের কর্মী হিসাবে। আবেদনের সঙ্গে জমা দিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্রও।

Advertisement

তার মধ্যে ছিল রেলকর্মী হিসাবে পরিচয়পত্র, বেতনের কাগজ, প্যান কার্ড, আধার কার্ড-সহ অনেক কিছুই। ঋণ মঞ্জুর করার আগে ব্যাঙ্ককর্মীরা আবেদনকারীর কর্মস্থলেও গিয়েছিলেন সরেজমিনে সবটা খতিয়ে দেখতে। আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য বলছিল, তিনি বজবজ স্টেশনে কর্মরত। ব্যাঙ্ককর্মীরা ওই স্টেশনে গিয়ে তাঁর দেখাও পেয়েছিলেন। জানতেও পেরেছিলেন, তিনি পূর্ব রেলের কর্মী হিসাবে ওই স্টেশনে কর্মরত। ফলে কোনও সন্দেহই হয়নি তাঁদের। এর পরেই মঞ্জুর হয়ে যায় ওই ব্যক্তির প্রায় ৩৮ লাখ টাকার ঋণও।

কিন্তু ঋণ পরিশোধের সময় আসতেই দেখা যায় তা শোধ হচ্ছে না। আবেদনকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বর সুইচড অফ। যে ঠিকানায় তিনি ফ্ল্যাট কিনবেন বলে আবেদন করেছিলেন, সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই রকম কোনও নির্মাণ কাজই হয়নি। এর পরেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের রাসবিহারী অ্যাভিনিউ শাখার ম্যানেজার।

Advertisement

আরও পড়ুন: এ রাজ্যে ‘সফট টার্গেট’ হতে পারেন পিকে, আশঙ্কা গোয়েন্দাদের, তাই জেড নিরাপত্তা

তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা দেখেন আবেদনকারী কস্মিনকালে কখনও পূর্ব রেলে চাকরি করেননি। বজবজ স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নামে কোনও রেলকর্মী বা ঠিকাকর্মী নেই। কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার আধিকারিকরা এর পর আবেদনকারীর ছবি এবং আবেদনের সময়ে ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মূল অভিযুক্ত সুব্রত মাইতিকে বারুইপুরের মল্লিকপুর থেকে পাকড়াও করে। আদতে সাগর দ্বীপের বাসিন্দা সুব্রত মল্লিকপুরে শাক-সব্জির ব্যাবসা করেন। সুব্রতকে জেরা করেই হদিশ মেলে তাঁর সঙ্গী শঙ্কর হালদারের। তাঁর বাড়ি মল্লিকপুরে।

জানা যায়, নিজেকে রেলকর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণের আবেদন জানানোর আগেই সঙ্গী শঙ্করকে দিয়ে একটি ভুয়ো নির্মাণ সংস্থা খোলে দু’জন। সেই সংস্থার নামে অন্য এক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের গড়িয়াহাট শাখায় একটি অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। ‘মেসার্স নির্মাণ কনস্ট্রাকশন’ নামে ওই ভুয়ো সংস্থার কাছ থেকেই ফ্ল্যাট কেনার জন্য গৃহঋণের আবেদন জানিয়েছিলেন সুব্রত। বজবজের মতোই একটি নির্মীয়মাণ প্রকল্পে কোম্পানির ভুয়ো বোর্ড ঝুলিয়ে নিজে প্রোমোটার সেজে ব্যাঙ্ককর্মীদের বোকা বানান শঙ্কর। এর পর ঋণের টাকা নির্মাণ সংস্থার অ্যাকাউন্টে ঢোকা মাত্রই দু’জনে পুরো টাকা তুলে নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘এতটাই নিখুঁত পরিকল্পনা যে ব্যাঙ্কের কর্মীরা বজবজ স্টেশনে গিয়ে দেখেন সুব্রত রীতিমতো টেবিল চেয়ার পেতে সেখানে স্টেশন মাস্টারের ঘরের পাশে একটি ঘরে রেলকর্মী হিসাবেই কাজ করছেন।”

দু’জনকেই মঙ্গলবার আদালতে পেশ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ বড় একটি প্রতারণা চক্র রয়েছে। যাঁরা খুব পরিকল্পনা করে ভুয়ো নথি তৈরি করে ব্যাঙ্ক প্রতারণা করছে।

আরও পড়ুন: বিদ্রোহ, কেলেঙ্কারি সব ছাপিয়ে তাপসের জন্য রয়ে গেল চোখের জল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement