আমহার্স্ট স্ট্রিটের কালী প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
খাতায়-কলমে পুজোর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি তিনি। আগুনে পুড়ে স্ত্রীর নৃশংস মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত। এখন জামিনে রয়েছেন। সেই ব্যক্তির সঙ্গে সংস্রবের অভিযোগেই সোমেন মিত্রের পুজো বলে পরিচিত, ৮৩ বছরের পুরনো আমহার্স্ট স্ট্রিটের বিখ্যাত কালীপুজোর গায়ে কালির ছিটে লাগছে। সুশান্ত চক্রবর্তী নামে এক কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে চাপান-উতোর বাড়ছে। প্রয়াত সোমেনের স্ত্রী শিখার সঙ্গে পুজোর পুরনো কর্মকর্তাদের বিরোধও ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে।
গত বছরের শেষে আমহার্স্ট স্ট্রিটে বাড়ির ভিতরেই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান শালিনী মিত্র। তিনি সোমেনের ছোট ভাই অতীন্দ্রনাথ মিত্রের (বুলবুল) কন্যা। তাঁর স্বামী তথা পুজোর কর্তা সুশান্ত পরে ওই ঘটনায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তদন্তে অভিযোগ ওঠে, অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে বিদেশে শালিনীর বোনের কাছে ভিডিয়ো পাঠাচ্ছিলেন সুশান্ত। অপমৃত্যুর এই ঘটনার জেরে মামলা হলে হাই কোর্ট সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, সুশান্তের বিরুদ্ধে প্রথমে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। জামিনে সম্প্রতি জেল থেকে বেরোলেও সুশান্তের আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় ঢোকা বারণ। কিন্তু নিজে উপস্থিত না-থেকেও কেটারিংয়ের ব্যবসায়ী সুশান্তই পুজোর ভোগের নেপথ্যে রয়েছেন বলে খবর।
সোমেন-জায়া শিখার অবশ্য দাবি, “দাদার (সোমেন) বাড়ির কেউ কেউ পুজোটা নানা লোভে কুক্ষিগত করতে চান।” সুশান্তকে কার্যত শংসাপত্র দিয়ে তিনি বলেন, “ও ভাল ছেলে! দাদার বাড়ির লোকেরা ইচ্ছা করে ওকে জড়িয়েছে।” তবে, ভোগের আয়োজনে সুশান্তের জড়িত থাকার বিষয়টি শিখা অস্বীকার করেছেন। আর যাঁকে নিয়ে এই বিতর্ক, সেই সুশান্ত বলছেন, ‘‘ঠাকুর দেখতে যেতে না-পারলেও শিখা মিত্রের নেতৃত্বে অবশ্যই পুজোর সব কাজের
সঙ্গে আছি।’’
আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রী শ্রী কালীপুজোর কর্মকর্তাদের একাংশ তথা জেনারেল সেক্রেটারি রামচন্দ্র সিংহ বলছেন, “শুনেছি, ভোগের কাজ সুশান্তই করছেন।” সুশান্তের মৃত স্ত্রীর বাবা তথা পুজোর অর্গানাইজ়িং সেক্রেটারি বুলবুলও বলছেন, “এক জন অভিযুক্তকে কালীপুজোয় জড়াতে ওদের বিবেকে বাধছে না। আমি এই পুজোর বহু বছরের পুরনো সৈনিক। আজ আমাদেরই কোণঠাসা করা হচ্ছে।”
পুজোর যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ এবং সোমেনের দীর্ঘ দিনের সহচর বাদল ভট্টাচার্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, পুজোর আর এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি সুমন রায়চৌধুরী বললেন, “অসীম সেন, রীতেশ বণিকের মতো কর্মকর্তারাই পুজোর ভোগের আয়োজনে।” সামগ্রিক চাপান-উতোর নিয়ে সুমনের দাবি, “একটা বড় পরিবারে ভুল বোঝাবুঝি হয়ই। নিশ্চয়ই সব মিটে যাবে।” তবে, এই বিরোধের জেরে গত বারের পরে পুজোর নতুন কমিটি গড়া যায়নি বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
এ বছর পুজোর সভাপতি তথা সোমেনের আর এক ভাই রবীন্দ্রনাথ মিত্র মারা গিয়েছেন। তাই এ বছর পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। পুজোর সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছেন, “এ পুজোয় কখনওই খরচের অডিট হয় না। তাই পুজোর সঙ্গে নানা মহলের স্বার্থ জড়িয়ে। তা ছাড়া, কলকাতা ময়দান ও রাজনীতির জগতের অনেকের বিশেষ নজরে এই পুজো।”
কালীপুজোর পরেও তাই পুজো দখলের চোরা স্রোত সহজে থামার সম্ভাবনা কম।