জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলির প্রায় সর্বত্রই সামগ্রিক ভাবে ৩০-৪৫ শতাংশ চিকিৎসক কম। —প্রতীকী চিত্র।
রীতিমতো রস্টার তৈরি করে দিন-রাত রোগীদের পরিষেবা দিতে হবে মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের। অন্তর্বিভাগ থেকে বহির্বিভাগ, এমনকি, জরুরি বিভাগের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। একই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষাদানও হবে এই পদ্ধতিতে।শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের জারি করা এই নির্দেশিকা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। চিকিৎসকদের বড় অংশের প্রশ্ন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় লোকবল বড় সমস্যা, ফলে এই নির্দেশিকা কি সর্বত্র কার্যকর করা সম্ভব?
সূত্র বলছে, জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলির প্রায় সর্বত্রই সামগ্রিক ভাবে ৩০-৪৫ শতাংশ চিকিৎসক কম। সেই পরিস্থিতিতে রস্টার তৈরি করে কী ভাবে পরিষেবা ও শিক্ষাদান সম্ভব? জেলার একটি মেডিক্যাল কলেজের এক বিভাগীয় প্রধানের কথায়, ‘‘কোনও বিভাগে তিন জন চিকিৎসক। নির্দেশিকা অনুযায়ী, কী ভাবে তাঁদের নিয়ে সাপ্তাহিক দিন-রাতের রস্টার তৈরি হবে, বুঝতে পারছি না।’’ নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সপ্তাহে ছ’দিন সাত ঘণ্টা করে চিকিৎসকদের ডিউটি করতে হবে। তার মধ্যে পালা করে রবিবারেও ডিউটি থাকবে। তবে, যে কোনও চিকিৎসক সপ্তাহে এক বারই টানা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করবেন। চিকিৎসক মহলের প্রশ্ন, চিকিৎসক কম থাকায় কি শ্রম আইনের বাইরে গিয়ে ১২ ঘণ্টার কথা বলা হয়েছে?
প্রতি বিভাগে ইউনিট তৈরি করে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। কিন্তু সূত্র বলছে, জেলার বহু মেডিক্যাল কলেজের একাধিক বিভাগে এক বা দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। কোথাও আবার বিভাগ থাকলেও চিকিৎসক নেই। সেখানে একটি ইউনিট করতে ন্যূনতম এক জন সিনিয়র শিক্ষক-চিকিৎসক, এক জন জুনিয়র শিক্ষক-চিকিৎসক ও এক জন সিনিয়র রেসিডেন্টের প্রয়োজন। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ, বিগত বছরে কোনও নিয়োগ হয়নি। পদোন্নতির ইন্টারভিউ এক বছর আগে হয়ে গেলেও তালিকা প্রকাশ হয়নি। চিকিৎসক মিলবে কোথা থেকে?
প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, রেডিয়োলজি বিভাগ সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার কথা বলা হয়েছে। এক জন চিকিৎসককে রাতেও থাকতে হবে। আবার, প্রতি বিভাগের এক জন শিক্ষক-চিকিৎসককে রাতে ভর্তির সময়ে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাতে সহকারী শিক্ষক-চিকিৎসককে ফ্লোর ডিউটি করতে হবে। রাতে অন-কল থাকা চিকিৎসক পরদিন ছুটি পাবেন না। কোনও ইউনিটের ভর্তির দিনে সকাল ৯টায় বহির্বিভাগে যাওয়ার আগে অন্তর্বিভাগের রোগী দেখে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। জরুরি বিভাগেও এক জন স্পেশ্যালিস্ট চিকিৎসককে থাকতে বলা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সের তরফে মানস গুমটা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর কার্যত ‘নেই রাজ্য’। সেখানে এমন নির্দেশিকা বলবৎ করতে হলে স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রতিটি কলেজে গিয়ে রস্টার তৈরি করতে হবে। নিরাপত্তাহীন কর্মক্ষেত্র। তাই নৈরাজ্য হলে তার দায় দফতরকেই নিতে হবে।’’ নির্দেশিকা অনুযায়ী রস্টার করলে রোগী ও চিকিৎসক উপকৃত হবেন। কিন্তু নির্দেশিকার সঙ্গে বাস্তবের সামঞ্জস্য নেই বলে দাবি সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের।