প্রশ্নে: রাজ্যসভার প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে দমদমের ওই স্কুলে লাগানো হয়েছে এমনই ফ্লেক্স। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের তোরণে ২১ ফুট বাই ৩ ফুট ফ্লেক্স নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক!
গত ৯ মার্চ রাজ্যসভায় প্রার্থী হিসাবে কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেনের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। এর পরে গত এক সপ্তাহে দমদম, বেলগাছিয়া, দক্ষিণ সিঁথি, চিড়িয়ামোড় অঞ্চলে শান্তনুকে প্রার্থী করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফ্লেক্স টাঙিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু সেই অনুগামীর তালিকায় দমদমের কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউশন (মেন) বয়েজের ম্যানেজিং কমিটি কেন, সেই প্রশ্ন ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ঘটনাচক্রে, রাজ্যসভার প্রার্থী আবার ওই স্কুলেরই ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক।
দমদম রেল স্টেশন সংলগ্ন স্কুলটিতে প্রায় ১৫০০ ছাত্র রয়েছে। শিক্ষক সংখ্যা ২৯ জন। গত সোমবার স্কুলে এসে বিরাট মাপের অভিনন্দন-ফ্লেক্স দেখে ‘হতবাক’ হন অভিভাবকেরা। ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে ফ্লেক্স কে টাঙিয়েছেন, তারও উল্লেখ রয়েছে। অভিভাবকদের বক্তব্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই অভিনন্দন বার্তা জানানোর কী কোনও প্রয়োজন ছিল? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠনের মান, পরিকাঠামোর মানোন্নয়নই গুরুত্ব পাওয়া উচিত। স্কুলের নামের চেয়ে আয়তনে বড় ফ্লেক্স টাঙিয়ে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘ম্যানেজিং কমিটিই যদি এই আচরণ করে তা হলে তো কিছু বলার নেই!’’
বিতর্কের কোনও দায় নিতে রাজি হননি স্কুলের টিচার ইন চার্জ তপন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ম্যানেজিং কমিটির কোনও বৈঠকে এ ধরনের ফ্লেক্স লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি। যিনি ফ্লেক্স টাঙিয়েছেন তিনি ম্যানেজিং কমিটিতে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি। স্কুল ওই ফ্লেক্সের দায়িত্ব নিচ্ছে না।’’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তোরণে কি এই অভিনন্দন-বার্তা কাম্য? সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন তপনবাবু। স্কুল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানান, যত দূর জানি ম্যানেজিং কমিটির এ কাজে সম্মতি নেই। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ অধিক সক্রিয়তা দেখিয়েছেন।
সূত্রের খবর, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি হলেন শান্তনু ‘ঘনিষ্ঠ’ কালিদাস (গৌতম) সাহা মণ্ডল। ওই ফ্লেক্স তিনিই টাঙিয়েছেন। বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিনি জানান, রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী যে হেতু ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক তাই ফ্লেক্সে অভিনন্দন জানিয়ে দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। তোরণ যে হেতু কলকাতা পুরসভার জমির উপরে নির্মিত, তাই স্কুল চত্বরে ফ্লেক্স টাঙানো হয়নি বলে যুক্তিও পেশ করেন। কিন্তু স্কুলের সঙ্গে যোগ না থাকলে তোরণে অভিনন্দন বার্তা কেন? এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কালিদাসবাবু। ফ্লেক্সের মাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ তহবিল থেকে স্কুলের উন্নয়নে টাকা যখন পাওয়া গিয়েছিল তখনও তো ৪০ ফুটের ফ্লেক্স দেওয়া হয়েছিল। ফ্লেক্স টাঙানোর মধ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদকের এমন উচ্চতায় পৌঁছনো আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। সেই আনন্দ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি।’’
কলকাতা সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘ফ্লেক্স টাঙানো হলে তা ঠিক হয়নি।’’ শান্তনুবাবুর বক্তব্য, ‘‘স্কুলের গেটে কোনও ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে বলে জানা নেই। যখন কিছু জানি না তখন কী মন্তব্য করব!’’