চেক হাতে: নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণে আহত শুভম দে-র মা শোভাদেবী। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
নাগেরবাজারে কাজিপাড়ার বিস্ফোরণে গুরুতর আহত ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় তাঁর জন্য ক্ষতিপূরণের চেক বিলি প্রদান মঞ্চে ‘অসুস্থ’ মাকে হাজির করানোয় বিতর্কের সৃষ্টি হল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে বৃহস্পতিবার মৃত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয় বিস্ফোরণস্থলেই।
পুরপ্রধান পাচু রায় ফল বিক্রেতা অজিতের সঙ্কটজনক অবস্থার কথা জানানোর পরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুভম দে-র উদ্বেগজনক শারীরিক অবস্থার কথা তোলেন। তার পরেই প্রতিবেশী স্বপ্না দত্ত-সহ কয়েক জনের সাহায্যে কোনও রকমে চেক নিয়ে মঞ্চের পাশের চেয়ারে বসে পড়েন শুভমের মা শোভাদেবী। কী হয়েছে, জানতে চাইলে আকারে-ইঙ্গিতে বোঝান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘বিস্ফোরণে আহত ছেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি শোনার পর থেকে মা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। অসুস্থ শরীরে মধ্যমগ্রামের বাড়ি থেকে নাগেরবাজারে আসতে চাননি। কিন্তু আসার জন্য খুব জোরাজুরি করা হয়। বলল, গাড়ি করে এনে আবার পৌঁছে দেবে। কিন্তু এক বার আসতেই হবে!’’ প্রৌঢ়ার শারীরিক অবস্থা দেখে দ্রুত গাড়ি নিয়ে আসার জন্য মাইকে ঘোষণা করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা পার্থ চৌধুরী। পুরপ্রধানের গাড়িতে শোভাদেবী ও স্বপ্নাদেবীকে পৌঁছে দেওয়া হয় মধ্যমগ্রামের বাড়িতে।
সঙ্কটজনক ছেলের চিকিৎসার ক্ষতিপূরণের চেক নেওয়ার জন্য মাকে মঞ্চে হাজির করানোর খুব দরকার ছিল কি? পুরপ্রধানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কাউকে জোর করে আনার প্রশ্ন নেই। শুভমের মা অসুস্থ হননি, ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন।’’
বিস্ফোরণে মৃত বালক বিভাস ঘোষের পরিবারকে এ দিন দু’লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। গুরুতর আহত শুভম, বিভাসের মা সীতা ঘোষ, ফল বিক্রেতা অজিত হালদার এবং কাজিপাড়ার বাসিন্দা সঙ্গীতা প্রসাদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও চার জন আহত চন্দ্রশেখর গুপ্ত, হারাধন সরকার, নবকুমার দাস এবং শরৎ শেঠিকে দক্ষিণ দমদম পুরসভার তরফে ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। তাঁদের হাসপাতালে সঙ্গীতার যাবতীয় চিকিৎসার খরচ যে তাঁরাই বহন করবেন, তা জানান সিইও নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায়। এ-সব ঘোষণার জন্য বিস্ফোরণস্থলের অদূরে মঞ্চ বেঁধে ক্ষতিপূরণের চেক বিলির ব্যবস্থা করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিস্ফোরণের ১০ দিন পরেও সিআইডি কাউকে ধরতে পারেনি। বিতর্কের আবহে সেই আলোচনাও বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফিরেছে। সম্ভবত সেই জন্যই তদন্তের অগ্রগতি বোঝাতে পুরপ্রধান তথা স্থানীয় কাউন্সিলর বলেন, ‘‘অজিত সিআইডি-কে জানিয়েছে, এক জন কালো রঙের লোক আটা কিনবে বলে একটি ব্যাগ রেখে চলে যায়। তার পরেই বিস্ফোরণ হয়।’’ ১০ দিন পরে এখানেই থেমে রয়েছে তদন্ত!