ফাইল চিত্র।
পুরসভার কাছে এক এক জনের পাওনা রয়েছে কোটি কোটি টাকা। আবার নতুন কাজের টেন্ডারের মূল্যও আকাশছোঁয়া। ফলত বেজায় সমস্যায় পড়েছেন হাওড়া পুরসভার ঠিকাদারেরা। পুরনো কাজের টাকাও হাতে আসছে না। আবার টেন্ডার নিয়ে নতুন কাজ ধরার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই তাঁদের। যার জেরে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন ওই ঠিকাদারেরা।
তাঁরা জানান, বৃহস্পতিবারই তাঁরা পুরনো বকেয়া টাকার জন্য এবং নতুন কাজের আবেদন জানাতে পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হয়নি বলেই দাবি ঠিকাদারদের। বকেয়া ধীরে ধীরে মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ তাঁদের নতুন কাজের প্রসঙ্গে কোনও রকমের আশা দেখাতে পারেননি বলেই খবর।
দীর্ঘদিন বেহাল দশায় পড়ে থাকা হাওড়া শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সারাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। সূত্রের খবর, সেই কাজের জন্যে আর্থিক বরাদ্দের জন্য অনুমোদন চাইলে পুরসভাকে তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে সরকারের শর্ত পিচের রাস্তা হলে কাজ শেষের পরেও পাঁচ বছর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ওই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যদি রাস্তা কংক্রিটের হয়, তবে ১০ বছর রাস্তার দেখভাল করতে হবে।
পুরসভা অনুমোদিত হাওড়ার বালি এলাকার ঠিকাদারদের পক্ষে প্রশান্তকুমার পালিত জানান, ইতিমধ্যেই বহু টাকা বকেয়া রয়েছে। ২০১৪সালে এনআইটি ৩ টেন্ডারের বকেয়া রয়েছে ১০কোটি ৩৯লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও এনআইটি ১৭ এবং এনআইটি ৫২ টেন্ডার দু’টির কাজের কয়েক কোটি টাকা বাকি। সমস্যার সমাধানে হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কন্ট্রাক্টর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বালি শাখার প্রতিনিধিদের একটি দল পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন।
ঠিকাদারেরা জানান, রাস্তা মেরামতির জন্য টেন্ডার করেছে পুরসভা। কিন্তু সেই টেন্ডারমূল্য এক থেকে দু’কোটি টাকার বেশি। পুরসভার ঠিকাদারদের পক্ষে তাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন কম টেন্ডারমূল্যের কাজ করায় তাঁদের সংস্থার আস্থাপত্র কম। ফলে এই বড় মাপের টেন্ডারমূল্যের কাজের জন্যে তাঁরা বিবেচিত হবেন না। সে ক্ষেত্রে বড় টেন্ডারগুলি ভেঙে একাধিক টেন্ডার করলে তাঁদের পক্ষে টেন্ডার অংশ নেওয়া সম্ভব।
পুর কমিশনার তথা পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, টেন্ডার ভেঙে কাজ দেওয়া আর হবে না। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা মেরামতি ও নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের শর্তের জন্যই টেন্ডারের মূল্য বেড়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশেই কৃত্রিম ভাবে কাজের পরিধি ভাঙ্গা যাবে না।’’
পাশাপাশি বকেয়া পাওনার বিষয়ে পুর কমিশনার জানান, বকেয়া মেটানোর কাজ চলছে। যদিও এনআইটি ৩ টেন্ডারের ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা থাকায় সেই কাজের পাওনা মেটানো এখনই সম্ভব হচ্ছে না।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাস্তা সারাইয়ের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গেছে শুধুমাত্র রাস্তাই নয়, ফুটপাতের হালও ফেরানো হবে। গত কয়েক মাস ধরেই ভাঙা রাস্তার কারণে ভারতের দূষণ মানচিত্রে প্রথমের দিকে উঠে এসেছে হাওড়ার নাম। রাস্তা সারানোর পাশাপাশি ফুটপাত থেকে ছড়ানো দূষণ রুখতে শহরের ফুটপাতগুলিকে পেভার ব্লক দিয়ে মুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পুরসভা।