যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেট্রোর কাজ

২০১২ সালের ডিসেম্বরে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে শুরু হয়েছিল মাটি খোঁড়া। বৃহস্পতিবার রাতে সেই স্টেশনের তলদেশ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করল কলকাতা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাতা সংস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০৭
Share:

জোরকদমে: ভূগর্ভে চলছে ঢালাই। শুক্রবার, শিয়ালদহে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

লোহা, কংক্রিট পেরিয়ে ঢালু রাস্তা, সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই চমক!

Advertisement

মাটির তলায় যেন যুদ্ধকালীন তৎপরতা। হেলমেট মাথায় শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ারেরা ছুটোছুটি করছেন। গহ্বরের ফাঁক দিয়ে বাইরে চোখে পড়ছে শিয়ালদহ কোর্ট। কানে আসছে গাড়িঘোড়ার শব্দ। গহ্বর থেকেই ক্রেনে চেপে নেমে আসছে ঢালাইয়ের মশলা। মাঝেমধ্যেই বেজে উঠছে সাইরেন।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে শুরু হয়েছিল মাটি খোঁড়া। বৃহস্পতিবার রাতে সেই স্টেশনের তলদেশ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করল কলকাতা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাতা সংস্থা। শুক্রবার তারা জানিয়েছে, প্রায় ২৪০০ ঘনমিটার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হতে হতে শনিবার রাত গড়িয়ে যাবে। এ দিন নির্মাণকাজ দেখতে হাজির হয়েছিলেন কলকাতা মেট্রো রেল নিগম ও নির্মাতা সংস্থার পদস্থ কর্তারা। তাঁরা জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণের ইতিহাসে এক লপ্তে এত বড় নির্মাণ এর আগে হয়নি।

Advertisement

নির্মাতা সংস্থা ‘আইটিডি-আইটি়ডি সিইএম’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক সরকার জানান, এই এলাকায় শিয়ালদহ স্টেশন, বি আর সিংহ হাসপাতাল, শিয়ালদহ কোর্ট, উড়ালপুল রয়েছে। তাই মাটি খুঁড়ে স্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে অতি সাবধানী হতে হয়েছে। সামান্য ভুল হলেই ওই নির্মাণগুলির ক্ষতি হতে পারত।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) বিশ্বনাথ দেওয়ানজি বলেন, যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে এই স্টেশন এ শহরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সালে দৈনিক সাড়ে চার লক্ষ যাত্রীকে পরিষেবা জোগাতে পারবে এই স্টেশন। এক দিকে রেল স্টেশন, অন্য দিকে বাস-ট্রামের স্ট্যান্ড— দু’দিক থেকে আসা যাত্রীদের জন্যই দু’টি আলাদা পথ রাখা হয়েছে। স্টেশনের সাবওয়ে থেকে সরাসরি মেট্রো স্টেশনে ঢুকে পড়া যাবে। এসপ্ল্যানে়ড ও হাওড়া স্টেশনকেও এমন ধাঁচে গড়ে তোলা হবে।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিকল্পনায় ঠিক করা হয়েছিল, প্রথম ধাপে সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। কিন্তু বর্তমানে প্রথমে সল্টলেক থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত মেট্রো চলবে। এর পিছনে লাইন পাতার পরিকল্পনার গলদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন অনেকে। এ দিন বিশ্বনাথবাবু জানান, সেন্ট্রালের বদলে এসপ্ল্যানেডে স্টেশন করার ফলেই শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো চালানো যাচ্ছে না। তাঁর ব্যাখ্যা, এসপ্ল্যানে়ড থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু হবে। মাটির তলা দিয়ে আসা সেই যন্ত্র শিয়ালদহ স্টেশন থেকে তুলতে হবে। আগে ঠিক ছিল শিয়ালদহ থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সেন্ট্রালে যন্ত্রটি তোলা হবে। উল্টো পথে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে হওয়ায় শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো চালানো যাচ্ছে না। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘মেট্রো লাইনের ক্রসিংটি শিয়ালদহ ও ফুলবাগানের মাঝামাঝি রয়েছে। তাই লাইনে কোনও সমস্যা নেই।’’

কবে চালু হবে শিয়ালদহ স্টেশন? মেট্রো রেল নিগমের কর্তারা জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ করার সময়সীমা রয়েছে। ২০১৮-র মে মাসে এসপ্ল্যানেড থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু হবে। ২০১৯-এর অগস্টে শেষ হবে সেই কাজ। সেপ্টেম্বর নাগাদ যন্ত্রটি তুলে নেওয়া হবে। ২০১৮-র গোড়া থেকে স্টেশনের বাকি কাজ শুরু হবে। ২০১৯-এর মধ্যেই শিয়ালদহ স্টেশনের কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন নির্মাতা সংস্থার কর্তারা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, প্রতি স্টেশন এবং সুড়ঙ্গের ভিতরে গরম হাওয়া বার করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে। এসপ্ল্যানে়ড ও শিয়ালদহ স্টেশনের মাঝে আপৎকালীন নির্গমন পথ ও গরম হাওয়া বার করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement