Crime

Constable Shot Woman: ‘মনে হচ্ছিল, এই বুঝি গায়ে গুলি লাগল, ভরদুপুরে বাড়ির সামনে যেন জঙ্গি হামলা দেখলাম’

বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক এই পাড়ায় এমন কাণ্ড দেখিনি। বরং বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের পাশের গলি বলে বরাবর বেশি নিরাপদ বোধ করতাম।

Advertisement

শিল্পী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৭:০৫
Share:

ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন শিল্পী ভট্টাচার্য। শুক্রবার, পার্ক সার্কাসে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

পর পর গুলির আওয়াজ। সঙ্গে চিৎকার। মনে হয়েছিল, বাইরে জঙ্গি হামলা হয়েছে। দুপুরের আপাত শান্ত আমাদের পাড়াটা মুহূর্তে যে এ ভাবে বদলে যাবে, ভাবতেই পারিনি। ঝুল-বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোটা দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আমারই গায়ে এসে গুলি লাগল!

Advertisement

পার্ক সার্কাসের লোয়ার রেঞ্জ রোডের এই বাড়িতে স্বামী সুবীর ভট্টাচার্য আর মেয়ে দেবস্মিতার সঙ্গে থাকি। সুবীরেরা এই পাড়ায় বহু দিনের বাসিন্দা। এই শরিকি বাড়িতে ওঁদের বহু আত্মীয় থাকতেন। বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক এই পাড়ায় এমন কাণ্ড দেখিনি। বরং বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের পাশের গলি বলে বরাবর বেশি নিরাপদ বোধ করতাম। এ দিন মেয়ে কাজে চলে যাওয়ার পরে আমি আর সুবীর খেতে বসেছিলাম। তখন প্রায় আড়াইটে। খাওয়া সবে শেষ হয়েছে, হঠাৎ গুলির আওয়াজ। সেটা যে গুলিরই আওয়াজ, প্রথমে বুঝতে পারিনি।

বারান্দায় গিয়ে দেখি, গোটা এলাকা শুনশান। আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে রাস্তায় একটি মেয়ের দেহ পড়ে। চাপ চাপ রক্ত। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি, পুলিশের পোশাক পরা এক জন এ দিক-ও দিক তাক করে গুলি ছুড়ছেন। তাঁর মুখ থেকে কেমন যেন ‘ওয় ওয়’ আওয়াজ বেরোচ্ছে। ওই ভাবে কিছুটা হেঁটে গিয়ে আমাদের লোয়ার রেঞ্জের রাস্তার চারমাথার মোড়ে তিনি দাঁড়ালেন। ডান দিকে তাক করে আবার গুলি চালালেন। সেই দৃশ্য দেখে সেখান থেকে ভয়ে ছুটে পালালেন কয়েক জন। ওই পথে আসা একটি মোটরবাইককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেন পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি। কিছুটা টাল সামলে বাইক ছুটিয়ে বেরিয়ে গেলেন চালক। সম্ভবত তাঁরও গায়ে গুলি লেগেছিল।

Advertisement

এর পরে ওই পুলিশকর্মী রাস্তার বাঁ দিকে কিছুটা হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বন্দুক দেখতে শুরু করলেন। ফের বন্দুক তুলে চারমাথার মোড়ের দিকে হেঁটে আসা আর এক জনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। কিন্তু গুলি বেরোল না। দেখি, বন্দুকের দিকে ঝুঁকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছেন তিনি। পরমুহূর্তে ফের গুলি চালানোর আওয়াজ। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ওই পুলিশকর্মী। সম্ভবত শেষ মুহূর্তে বন্দুকটা কাজ করছিল না। সেটা ঠিক করতে গিয়ে বন্দুকের নলের সামনে যে নিজের মুখটা চলে এসেছে, হয়তো বুঝতে পারেননি। এর পর থেকে সারা দিন ধরে আমাদের বাড়ির সামনে শুধু স্থানীয় মানুষ আর পুলিশের ভিড়। কিছু ক্ষণ পরে পুলিশ এসে বাড়ির সামনে পড়ে থাকা মেয়েটির দেহ সরিয়ে নিয়ে গেল। গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হল জায়গাটা।

ঘটনার সময়ে আমার স্বামী বার বার পিছন থেকে ডাকছিলেন, ‘বাইরে যেও না। গুলি চলছে’। রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতেই বারান্দায় লুকিয়ে গোটা ঘটনা দেখেছি। সিনেমায় বা খবরে দেখা জঙ্গি হামলার মতো দৃশ্য যে নিজের বাড়ি থেকে কোনও দিন দেখতে হবে, সেটা ভাবিনি। আমার বয়স্ক মা ফোন করেছিলেন। তিনিও রীতিমতো উত্তেজিত। শুধু জানতে চাইছিলেন, আমরা ঠিক আছি কি না!

আমরা তো ঠিক আছি। কিন্তু শুনলাম, সামনে যে মেয়েটির দেহ পড়েছিল, তাঁর মাত্র ২৮ বছর বয়স। আমার মেয়েরই মতো। শুনলাম, আজই মেয়েটির বিয়ের পাকা কথা হওয়ার ছিল! পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। ভাবা যাচ্ছে না। মানুষের জীবনের কোনও নিশ্চয়তাই নেই! এই রাস্তা দিয়েই আমার মেয়েও অফিস গিয়েছে। ভাবলেই বুকটা কেঁপে উঠছে।গুলি-কাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement