সল্টলেক

যানশাসনে অব্যবস্থা, তাই পরপর দুর্ঘটনা

দৃশ্য ১। উইপ্রো মোড়ের কাছে। নবদিগন্ত উড়ালপুল থেকে নেমে ই এম বাইপাস যাওয়ার পথে চলছে মেট্রো প্রকল্পের কাজ। তৈরি হয়েছে বড় বড় পিলার। নেই গার্ড ওয়াল, সিসি ক্যামেরা বা পুলিশের নজরদারি। উড়ালপুল থেকে দ্রুত গতিতে নামছে গাড়ি, নেই কোনও স্পিড ব্রেকার।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
Share:

এ ভাবেই যাতায়াত। চার নম্বর ফুট ব্রিজের কাছে খালপাড় রোডে। — নিজস্ব চিত্র

দৃশ্য ১। উইপ্রো মোড়ের কাছে।

Advertisement

নবদিগন্ত উড়ালপুল থেকে নেমে ই এম বাইপাস যাওয়ার পথে চলছে মেট্রো প্রকল্পের কাজ। তৈরি হয়েছে বড় বড় পিলার। নেই গার্ড ওয়াল, সিসি ক্যামেরা বা পুলিশের নজরদারি। উড়ালপুল থেকে দ্রুত গতিতে নামছে গাড়ি, নেই কোনও স্পিড ব্রেকার। ওই রাস্তা ধরেই গাড়ি যাচ্ছে সল্টলেকের দিকেও। মাঝেমধ্যে ট্র্যাফিক বিধি ভেঙে ‘ইউ-টার্ন’ও নিচ্ছেন কেউ কেউ। সে সময়ে উল্টো দিক থেকে দ্রুত গতিতে গাড়ি এলে আর রক্ষে নেই।

দৃশ্য ২। সল্টলেকে খালপাড় বরাবর দু’দিকের রাস্তা।

Advertisement

রাস্তার দু’দিক থেকেই গাড়ি ইচ্ছেমতো যাতায়াত করছে। বিভাজক (রোড ডিভাইডার)-এর কোনও বালাই নেই। অথচ এই পথেই রয়েছে এক দিকে ভিআইপি রোড, কেষ্টপুরের সঙ্গে সল্টলেকে একাধিক প্রবেশপথ, অন্য দিকে রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের উপরে তিনটি কালভার্ট ও তিনটি মোটরবাইক, সাইকেল, রিকশা পারাপারের রাস্তা। সেই রাস্তা ধরেই যেতে হয় স্কুল, হাসপাতালেও।

দৃশ্য ৩। বিদ্যাসাগর আইল্যন্ড থেকে ময়ূখভবন মোড়ের রাস্তা।

সল্টলেকের অফিসপাড়ার প্রাণকেন্দ্র বলেই পরিচিত এই রাস্তা। অথচ, এখানেই রাস্তার দু’ধারে ইচ্ছেমতো হচ্ছে গাড়ি পার্কিং। পার্কিংয়ের ভিড় ছোট রাস্তাতেও। যার জেরে দিন-দিন ছোট হচ্ছে রাস্তার পরিসর। তারই মধ্যে আবার চলছে অটো-বাসের বেপরোয়া চলাচল, ওভারটেকের প্রতিযোগিতা। বাস-অটোর দাদাগিরি নিয়ন্ত্রণের জন্য শাসন করতে উদ্যোগী নয় প্রশাসন।

এমন ছবি শুধু দু’-তিন জায়গায় নয়, রয়েছে সল্টলেক জুড়েই। তা সে চিংড়িহাটা-বাইপাসের সংযোগস্থলই হোক বা সিটি সেন্টার মোড়। নামেই পুলিশ কমিশনারেট। খাতায়-কলমে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর বড় বড় ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডের ভিড়। বাস্তবে সল্টলেক এখন দুর্ঘটনার প্রাণকেন্দ্র। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সল্টলেকে একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনা অনিবার্য।’’

বিধাননগর পুলিশের একাংশের কর্তারা বলছেন, সম্ভবত এমনই ফাঁদে পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন শিক্ষক দিব্যেন্দু পাল। উড়ালপুল থেকে নামার পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি সোজা ধাক্কা মারে নবনির্মিত মেট্রোর পিলারে।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ যাতায়াত করছেন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির চাপ। ট্র্যাফিক পরিকাঠামো বাড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া পুলিশের বা সিসি ক্যামেরার নজরদারি নেই বললেই চলে। উল্টো দিকে, পুলিশের বজ্র আঁটুনি না থাকায় গাড়ির চালকদের একাংশও ইচ্ছেমতো ট্র্যাফিক নিয়ম ভাঙছেন। যেমন, এএল-বিএল ব্লকের মাঝের রাস্তা ধরে পাঁচ নম্বর সেক্টর যাওয়ার মোড়ে গাড়ির গতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তা মানেন না কোনও গাড়িচালকই।

আড়ালে এই অভিযোগ স্বীকার করে নিচ্ছেন বিধাননগর পুলিশের কর্তারাও। তাঁদেরই এক জনের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে কিছু ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক ভাবে নেওয়া হয়েছে। তাতে দুর্ঘটনাও কমেছে। তবে এখনও কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। তা-ও দ্রুত মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’

বিধাননগরের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা বসানো চলছে। দুর্ঘটনা রুখতে পরিকাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি পথচারী ও চালকদের সচেতনতায়ও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement