কংগ্রেসের জয়োল্লাস। মঙ্গলবার।— নিজস্ব চিত্র।
বন্দর এলাকায় তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাল কংগ্রেস। আর সব ওয়ার্ডেই নিজের অস্তিত্বের জানান দিল বিজেপিও।
২০০৯-এর লোকসভা ভোটের প্রায় ছ’বছর পরের পুরভোটে কংগ্রেস ও বিজেপি-র জোড়া ধাক্কায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বন্দরে তৃণমূলের পালের হাওয়া অনেকটা চলে গেল বলেই মত রাজনৈতিক মহলে। গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজে সিপিএমও কার্যত সাফ। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। তবে কিছু আসনে তৃণমূলের সঙ্গে লড়েছে বিজেপিও।
পুরভোটের ফলের পরে ১৫ নম্বর বরোতে সিপিএম কার্যত সাইনবোর্ড। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে ১৫ নম্বর বরোর ৯টি আসনের মধ্যে দু’টি ছিল সিপিএমের। এ বার একটিও জোটেনি। তবে দু’টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তাঁরা। বরং বন্দর এলাকায় প্রায় সব ওয়ার্ডেই মাথাচাড়া দিয়েছে কংগ্রেস। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিজেপি।
কংগ্রেসের দাপটে ব্যাকফুটে তৃণমূলও। ফল ঘোষণার পরে গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজে চাপা গুঞ্জন, ‘কংগ্রেসের ধাক্কায় আনসারি পরিবারের দাপট কী খতম?’
ফল বিশ্লেষণের পরে উঠে আসছে এমনই তথ্য। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘনিষ্ঠ আনসারি পরিবার আপাতত অনেকটাই ব্যাকফুটে বলে গুঞ্জন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের গলায়। নিজে জিতলেও পরিজনদের পরাজয়ে ধরাশায়ী বিদায়ী বোর্ডের মেয়র পারিষদ সামসুজ্জামান আনসারি। তাঁর পুত্রবধু রুবিনা নাজ ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের কাছে পরাজিত। অথচ তা রুবিনার দখলেই ছিল। সামসুজ্জামানের ভাই ঝুন্নু আনসারি আগে তিন বার ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিপিএমের টিকিটে জয়ী হন। এ বার নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ওই ওয়ার্ডেই পরাজিত হয়ে তৃতীয় স্থানে ঝুন্নু। বিজয়ী নির্দল প্রার্থী রেহামত আলি আনসারি সম্পর্কে সামসুজ্জামান ও ঝুন্নুর ভাইপো।
বন্দর এলাকার একচ্ছত্র ‘অধিপতি’ সামসুজ্জামানকে ১৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে যথেষ্ট বেগ দিয়েছেন সম্পর্কে তাঁর বেয়াই কংগ্রেসের মহম্মদ মোক্তারও। সামসুজ্জামান জিতলেও প্রশ্ন উঠছে ভোটের ব্যবধান নিয়ে। ওই ওয়ার্ডে কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা এক সময়ের দাপুটে নেতা দিলীপ সেনের স্ত্রী সিপিএম প্রার্থী বিজলি সেন-এর সঙ্গে লড়তে হয়নি সামসুজ্জামানকে। তাঁর মূল লড়াই ছিল মোক্তারের সঙ্গেই। বিজলি ওই ওয়ার্ডে তৃতীয় স্থানে।
হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র নির্বাচনের ঘটনায় কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষে পুলিশকর্মী তাপস চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান মুন্না ইকবালের ছেলে শাম্স ইকবাল অবশ্য জিতেছেন ১২০০০ ভোটে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ১৫ নম্বর বরোর ৯টি আসনে কংগ্রেস ২, নির্দল ১ এবং তৃণমূল ৬। ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বিজয়ী। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি।
আনসারি পরিবারের বড়কর্তা সামসুজ্জামান অবশ্য ফল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘হার-জিত রয়েছে। ও সব ভেবে মাথা ব্যথা করা ঠিক নয়।’’ যদিও আনসারি পরিবারকে কংগ্রেস যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে বলেই দাবি সামসুজ্জামানের বেয়াই মোক্তারের। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রভাব খাটিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হত। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হত। মানুষ তার জবাব দিয়েছে।’’
মুন্নার ‘জয়ী’ ছেলে শাম্স ইকবাল বলেন, ‘‘আমাকে বিপুল ভোট দিয়ে বন্দরের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাবা নির্দোষ।’’
বন্দরের নতুন সমীকরণ কংগ্রেস ও বিজেপি বনাম তৃণমূল। কয়েক মাস পরে বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীদের দাবি, পুর-নির্বাচনে অনেক জোরজবরদস্তি করে ভোট করা হয়েছে। তাও কংগ্রেসকে আটকানো গেল না। বিজেপিও কয়েক জায়গায় ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তখন আবার মন্ত্রীর আসন টলে না যায়।