এ ভাবেই ভাঙচুর করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
দু’দিকেই দাঁড়িয়ে মারমুখী লোকজন। কেউ ছুড়ছে আধলা ইট, কেউ বা কাচের বোতল। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর এই সংঘর্ষে প্রায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন টালিগঞ্জ রোড। যা চলে প্রায় ভোর পর্যন্ত। দাহ করাতে আসা লোকজনের অনেকেই রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মৃতদেহ ফেলেই প্রাণভয়ে এ দিক-ও দিক লুকিয়ে পড়েন। শেষমেশ তিনটি থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। বৃহস্পতিবার দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গোলমালের সূত্রপাত গত বুধবার। অভিযোগ, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে মালা রায়ের কয়েক জন অনুগামী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের এক অনুগামীকে লক্ষ্য করে অশালীন কিছু মন্তব্য করে। আর তা থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। যা হাতাহাতিতে পৌঁছয়। এমনকি, একে অপরের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় সূত্রের খবর, শ্মশান থেকে কয়েক মিটার দূরেই রয়েছে মালা রায় ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দলীয় কার্যালয়। এ ছাড়া, শোভনদেবের লোকজন শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির দিকের গেটের পাশেই ফুটপাতে একটি অস্থায়ী পার্টি অফিস তৈরি করেছে বেশ কয়েক বছর আগে। সেটি থাকবে না তুলে দেওয়া হবে, তা নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গোলমাল চলছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। বুধবার যা সংঘর্ষের আকার নেয়।
পুলিশ জানায়, দুই দলই বিরোধী গোষ্ঠীর দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ভেঙে ফেলা হয় চেয়ার। ছিঁড়ে ফেলা হয় দলীয় পতাকা, এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর ফ্লেক্সও। শ্মশানের গেট লাগোয়া এলাকায় ইট আর বোতল বৃষ্টি হতে দেখে দাহ করাতে আসা লোকজন ভয় পেয়ে যান। খবর যায় টালিগঞ্জ, কালীঘাট এবং চারু মার্কেট থানায়। লিশের বিশাল বাহিনীকে দেখেও দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ থামেনি। উল্টে পুলিশকে লক্ষ্য করেই উড়ে আসে ইট, বোতল। দফায় দফায় ভোর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকায় পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠি চালিয়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শোভনদেব বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সমাজবিরোধীদের আশ্রয় দিয়ে এ ধরনের কাজ করানো হচ্ছে। আমি দলকে জানাব। দল যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’ আর যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে মালা রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ছেলেরা কোনও গালিগালাজ করেনি। ওরাই দুষ্কৃতী এনে আচমকা আমাদের পার্টি অফিসে ঢুকে ভাঙচুর করে। এর সঙ্গে ফুটপাতের পার্টি অফিসের কোনও যোগ নেই।’’