জমি-বিবাদেই হত্যা, ৩ ভাড়াটে খুনি-সহ ধৃত ৮

জমি কেনাবেচা ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার। সেই কারবারে বাধা হয়ে দাঁড়ানোতেই খুন হয়েছেন নিউ টাউনের পাথরঘাটার বাসিন্দা, পেশায় জমি জরিপকারী চঞ্চল মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

জমি কেনাবেচা ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার। সেই কারবারে বাধা হয়ে দাঁড়ানোতেই খুন হয়েছেন নিউ টাউনের পাথরঘাটার বাসিন্দা, পেশায় জমি জরিপকারী চঞ্চল মণ্ডল। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ এবং নিউ টাউন থানার তদন্তে দু’দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের কিনারা হওয়ার পরে ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি মঙ্গলবার যা জানালেন, তার নির্যাস অন্তত সে রকমই। ওই খুনের ঘটনায় মোট আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের তিন জন ভাড়াটে খুনি।

Advertisement

ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণেই পরিকল্পনা করে রবিবার সন্ধ্যায় চঞ্চলকে খুন করা হয়েছে বলে প্রথম থেকে অনুমান করছিলেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্গাপুজোর সময়ে পাথরঘাটা হাইস্কুল সংলগ্ন নিজের বাড়িতেই চঞ্চলকে খুনের পরিকল্পনা করে অজিতেশ হালদার। সেই পরিকল্পনার শরিক ছিল অজিতেশের সর্বক্ষণের সঙ্গী, নতুনপুকুরের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল ও নিহতের ভাইপো বিকাশ মণ্ডল (ভুলু)। ভাড়াটে খুনির প্রাপ্য টাকা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছিল সুভাষ।

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার মুখে অজিতেশ দাবি করেছে, বিকাশের দাদুর একটি জমি হাতিয়ে নিয়েছিলেন চঞ্চল। নিজের পেশাকে কাজে লাগিয়ে পাথরঘাটার এমন অনেক জমি থেকেই আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছিলেন চঞ্চল। বিকাশ নিজের কাকার এই কাজে সব সময় অজিতেশের কাছে দুঃখ করত। সে জন্য বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে এই খুনের পরিকল্পনা করা হয়। তদন্তকারীদের বক্তব্য, অজিতেশের এই বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে। কারণ, তার এই গল্পের সত্যতা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

চঞ্চলকে মারতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগে নিজের ‘খাস লোক’, ভাঙড়ের বাসিন্দা নীলমাধব সাহার সাহায্য নেয় অজিতেশ। পেশায় আমিন নীলমাধব ঘটকপুকুরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ রফিক মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে মোহর লস্কর, শেখ সিরাজুল ওরফে পাগলা এবং শেখ রফিক নামে তিন ভাড়াটে খুনিকে নিয়োগ করে। তাদের সঙ্গে দু’লক্ষ টাকার চুক্তি হয় অজিতেশের। মোটরবাইক, আগ্নেয়াস্ত্র এবং মোবাইলের খরচ আলাদা। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’টি বাইক জোগাড় করেছিল মহম্মদ রফিক মোল্লা ওরফে মহম্মদ ভাই। আগ্নেয়াস্ত্র মোহর জোগাড় করে। মোবাইল দেয় অজিতেশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ছ’মাস ধরে পরিকল্পনা করার পরে দিন কয়েক আগে পাথরঘাটার একটি ভাড়া বাড়িতে আস্তানা গেড়েছিল তিন দুষ্কৃতী। ধৃতদের মধ্যে শেখ রফিক ও শেখ সিরাজুল পূর্ব মেদিনীপুরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী কর্ণ বেরার সঙ্গী বলে সন্দেহ পুলিশের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময়ে পাথরঘাটা বাজারে মুরগির ব্যবসা করত অজিতেশ। সেখান থেকে দু’বছর আগে মছলন্দপুরে বিএড কলেজের মালিক হয়ে যায় সে। অজিতেশের স্ত্রী বলেন, ‘‘বিএড কলেজের একটি ঘটনা নিয়ে স্বামীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সারা দিন কলেজ নিয়েই স্বামী ব্যস্ত থাকত। জমি কেনাবেচার সঙ্গে বিন্দুমাত্র যোগ নেই।’’

তদন্তকারীরা জানান, দু’বছর আগে বিএড কলেজের জন্য চঞ্চলের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিল অজিতেশ। সেই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। তদন্তে নেমে চঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসায়িক শত্রুতা কার কার ছিল, তা চিহ্নিত করে অজিতেশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতেই সাফল্য পায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের পরে অজিতেশের সঙ্গে ভাড়াটে খুনিদের ফোনে কথা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই দিন খুনের পরে চঞ্চলের বাড়িতে এসেছিল অজিতেশ। পরদিন ঘটকপুকুরে নীলমাধবের কাছ থেকে কাজ বাবদ বাকি এক লক্ষ টাকা নিয়ে আসে মোহর এবং মহম্মদ রফিক মোল্লা। পুলিশ সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীরা টাকা নেওয়ার আগে কাগজ দেখিয়ে বলে, ‘কাজ হয়ে গিয়েছে’!

জমি কেনাবেচার কারবারে চঞ্চল আর্থিক ভাবে কতখানি লাভবান হওয়ায় অভিযুক্তদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন, তা এ দিন স্পষ্ট করেনি পুলিশ। তবে ডিসি জানিয়েছেন, চঞ্চলের উপস্থিতিতে জমি কেনাবেচার সাম্রাজ্যে ডানা মেলতে অসুবিধা হচ্ছিল অজিতেশদের। সম্ভবত সে জন্যই খুনের পরিকল্পনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement