Fire Accident

ফুটপাত জুড়ে দাহ্য বস্তু, অগ্নি-বিধি শিকেয় বড়বাজারে

ঘটনাস্থল চিৎপুর তথা বড়বাজার এলাকা। সম্প্রতি সেখানকার গোবিন্দচন্দ্র ধর লেনে একটি ঘিঞ্জি এলাকার পাশেই প্লাস্টিক-সহ নানা দাহ্য বস্তুর গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগে।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ০৭:২৮
Share:

নাখোদা মসজিদের আশপাশের ঘিঞ্জি এলাকায় তারের কুণ্ডলী। ছবি: সুমন বল্লভ। 

রাস্তার দু’ধারে চামড়া ও প্লাস্টিকের চটির দোকান। উপর দিয়ে জালের মতো প্লাস্টিকের তার। ফুটপাত তো কবেই উধাও। বাণিজ্যিক এলাকা হলেও আবাসিকদের সংখ্যাও কম নয়। তা সত্ত্বেও অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা শিকেয় তুলে দিয়ে দিনের পর দিন কার্যত ওই জতুগৃহের মধ্যেই চলছে মানুষের জীবন।

Advertisement

ঘটনাস্থল চিৎপুর তথা বড়বাজার এলাকা। সম্প্রতি সেখানকার গোবিন্দচন্দ্র ধর লেনে একটি ঘিঞ্জি এলাকার পাশেই প্লাস্টিক-সহ নানা দাহ্য বস্তুর গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগে। ছাদ টপকে, জানলায় দড়ি বেঁধে নেমে প্রাণে বাঁচেন সংলগ্ন বহুতলের লোকজন। জায়গাটি বাগড়ি মার্কেট থেকে বেশি দূরে নয়। কয়েক বছর আগে ওই বাজারে যখন আগুন লাগে, তখন তা বড় আকার ধারণ করেছিল রাসায়নিক ভরা সুগন্ধী ও বাজারের গেট ফুটপাতের দোকানের জন্য আটকে থাকার কারণে।

ওই গুদামের আশপাশে ঘুরে দেখা গেল, অগ্নি-সুরক্ষার প্রশ্নে সর্বত্রই একটা ঢিলেঢালা পরিস্থিতি। ফুটপাত প্রায় উধাও হয়েছে ডালা কিংবা দোকানের কারণে। চিৎপুর রোড তো বটেই, অলিগলির হালও একই রকম। আগুন লাগলে দমকল পৌঁছতে যে হিমশিম খাবে, মানছেন স্থানীয়েরাও।

Advertisement

আগুন গত সোমবার যেখানে লেগেছিল, সেখানকার বাসিন্দারা জানান, আশপাশের তার জ্বলে ছড়িয়ে পড়ছিল। চিৎপুর, বড়বাজার, নাখোদা মসজিদের আশপাশ, বাগড়ি মার্কেট, ক্যানিং স্ট্রিটের মতো জায়গাগুলিতে হাঁটলেই চোখে পড়বে মাথার উপরে তারের জঙ্গল। যত্রতত্র আগুন জ্বেলে চলছে রান্না। আবার রাস্তার ধারের জুতোর দোকানের সামনে দাঁড়ালে ভেসে আসবে রাসায়নিকের গন্ধ। অধিকাংশ দোকানে নেই কোনও অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। দিনের ব্যস্ত সময়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার জায়গা পর্যন্ত নেই। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাখোদা মসজিদের উল্টো দিকের মুসাফিরখানার ভিতর দিয়ে দমকল পাইপ নিয়ে গিয়েছিল। গলি ঘুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পথ সারা দিনই নানা ভাবে অবরুদ্ধ থাকে বলেই অভিযোগ।

প্রশ্ন রয়েছে ফুটপাতের দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েও। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুটপাতের দোকান তোলা যাবে না। তাই পাকা দোকানিদের একাংশ নিজেদের থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দিচ্ছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। সেখানে লোড পরীক্ষা করা হয় না। অভিযোগ, যে কোনও মুহূর্তে শর্ট সার্কিটের আশঙ্কা থাকলেও প্রশাসনের নজর নেই সে দিকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী তথা বাসিন্দা ঔরঙ্গজেব খান নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, ব্যবসাকেন্দ্রের আড়ালে নিয়ম না মানাটাই দস্তুর ওই তল্লাটে। তিনি বলেন, ‘‘বিপজ্জনক ভাবে তারের জঙ্গল রয়েছে এলাকা জুড়ে। আমার বাড়ির সামনে অ্যাম্বুল্যান্স আসার জায়গাও নেই। আমারও দোকান রয়েছে বড়বাজারে। ফুটপাত দখল করে মালপত্র রেখে দেওয়া হচ্ছে। আমি কলকাতার মেয়র, পুলিশ কমিশনার-সহ একাধিক জায়গায় চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছি। এর পরে হয়তো আদালতের দ্বারস্থ হব।’’

সমস্যার কথা মানছে দমকল দফতর। কিন্তু পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা তারাও দেখছে না। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর কথায়, ‘‘আমরা ব্যবসায়ীদের বার বারই পরামর্শ দিই যাতে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানা হয়। বাগড়ি মার্কেটে জলাধারও তৈরি করে দিয়েছি। ফায়ার অডিটের সময়ে সমস্যা পাওয়া গেলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা কারও ভাত মারার পক্ষে নই। কিন্তু তাঁদের সুরক্ষার জন্যই বিধি মেনে চলা উচিত।’’

এই পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, ‘‘হকারদের অনেকেই দেড় ফুট করে ছেড়ে বসেন না। গুদামের মাল বাইরের রাস্তায় এনে বিক্রি করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি গুদাম সরাতে। ব্যবসায়ীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করতেও চেষ্টা চলছে। তবে পুলিশকেও সক্রিয় হতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement