App CAbs

জীবাণুমুক্ত করার বালাই নেই অ্যাপ-ক্যাব, উঠছে অভিযোগ 

অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, কোনও অ্যাপ-ক্যাবেই যাত্রী তোলার আগে চালকেরা জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছেন না।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৬:১০
Share:

ফাইল চিত্র

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন স্বামী। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় দূর থেকে তাঁর দেহ দেখে রাস্তায় বেরিয়ে অ্যাপ-ক্যাব বুক করলেন মৃতের স্ত্রী ও এক আত্মীয়। গাড়ি আসতেই তাতে উঠে তাঁরা রওনা দিলেন নিজেদের গন্তব্যে। ওই দু’জনের গাড়িতে ওঠার আগে কিন্তু চালককে দেখা গেল না সরকারি নিয়ম মেনে আসনগুলিতে জীবাণুনাশক ছড়াতে। যা দেখে হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত লোকজনের প্রশ্ন, করোনায় মৃতের আত্মীয়েরা নিজেদের গন্তব্যে নামার পরেও কি অ্যাপ-ক্যাবটি জীবাণুমুক্ত করবেন চালক? তিনি কি জানেন কাদের তাঁর গাড়িতে তুললেন?

Advertisement

অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, কোনও অ্যাপ-ক্যাবেই যাত্রী তোলার আগে চালকেরা জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছেন না। লকডাউন শিথিল হওয়ার প্রথম পর্যায়ে ১০০টি অ্যাপ-ক্যাব রাস্তায় নামানোর অনুমতির সঙ্গেই সংক্রমণ রোধে কী ব্যবস্থা রাখতে হবে তার নির্দেশিকাও জারি করেছিল রাজ্য সরকার। পরের ধাপে ১০০০ এবং তার পরবর্তী সময়ে অ্যাপ-ক্যাব পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। প্রতি ক্ষেত্রেই সুরক্ষা-বিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছিল, সংক্রমণ রোধে মাস্ক, গ্লাভস পরার পাশাপাশি চালক ও যাত্রীর আসনের মাঝে প্লাস্টিকের পর্দা লাগাতে হবে। এক যাত্রী নামার পরে অন্য যাত্রী তোলার আগে গাড়ির আসন, দরজা সর্বত্র জীবাণুনাশক ছড়াতে হবে চালককে।

কিন্তু অধিকাংশ অ্যাপ-ক্যাব চালকই নির্দেশিকা মানছেন না বলে অভিযোগ খোদ ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘প্রতিটি গাড়ি সুরক্ষা-বিধি মেনে চলছে বলে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি প্রচার করলেও আদতে তা পুরোপুরি হচ্ছে না। অধিকাংশ গাড়িতেই চালক ও যাত্রীর মাঝে কোনও প্লাস্টিকের পর্দা নেই। এক যাত্রী নামার পরে অন্য জনকে ওঠানোর আগে কী ভাবে আসন, দরজার হাতল জীবাণুমুক্ত করতে হবে, সে সম্পর্কেও অজ্ঞতা রয়েছে অধিকাংশ চালকের। এমনকি ওই কাজে যে সরঞ্জাম বা রাসায়নিক লাগে সেগুলিও কোনও সংস্থাই সরবরাহ করছে না।’’ তাঁর মতে, সংক্রমণ রুখতে সংস্থাগুলিকেই চালকদের সুরক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

Advertisement

যদিও অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা ‘উব্র’-এর এক মুখপাত্রের দাবি, তাঁদের প্রতিটি গাড়িতে চালকের সামনে একটি মোবাইল থাকে। তাতে সংস্থার অ্যাপ্লিকেশনস দেওয়া রয়েছে। যাত্রী তোলার পরে তিনি মাস্ক ও গ্লাভস পরেছেন কি না, সেই ছবি ওই অ্যাপ্লিকেশনসের মাধ্যমে সংস্থার কাস্টমার কেয়ারে চালককে পাঠাতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘চালকেরা কী ভাবে গাড়িটি জীবাণুমুক্ত করবেন সেই বিষয়ে একটি ভিডিয়ো বানিয়ে সকলকে পাঠানো হয়েছে।’’

‘ওলা’র তরফে জানানো হয়েছে, শহরে তাদের গাড়ি স্যানিটাইজ় করার জন্য কয়েকটি সেন্টার করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হয়। সেখানে সেফটি কিট, গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া প্লাস্টিকের পর্দা তৈরির খরচও সংস্থার তরফে দেওয়া হয়। তবে কোনও অভিযোগ থাকলে তা যাত্রীদের জানাতে হবে। তবেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

অ্যাপ-ক্যাব চালকদের একাংশও মানছেন, মাস্ক বা গ্লাভস পরলেও যাত্রী তোলার আগে স্যানিটাইজ় করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এক চালকের কথায়, ‘‘সংক্রমণ রুখতে হলে আসন, দরজার হাতল সব জায়গায় ভাল করে জীবাণুনাশক ছড়াতে হবে। এমনিতেই ভাড়া বেশি হচ্ছে না। স্যানিটাইজ়ারের খরচ কোথায় পাব?’’

ইন্দ্রনীলবাবু জানান, আগে প্রতিদিন রাস্তায় ২০ হাজার গাড়ি নামত। এখন সেই সংখ্যা কমে দু’-তিন হাজারে নেমে এসেছে।

যাত্রী থেকে চালক কিংবা চালকের থেকে যাত্রীর সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কোনও যাত্রীর মধ্যে করোনা রয়েছে কি না, তা ক্যাবচালকের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে শহরের রাস্তায় অ্যাপ-ক্যাব চড়াটা এখন কতটা নিরাপদ তা নিয়েও সংশয় থাকছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement