—প্রতীকী চিত্র।
চাকরির ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পরে স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, অ্যাপ-ক্যাব নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা ওই যুবক অনেক ক্ষণ পরেও বাড়ি না ফেরায় মাঝরাতে তাঁর স্ত্রী স্বামীর মোবাইলে ফোন করেন। ফোন ধরেন ওই যুবকের বন্ধু ও সহকর্মী এক মহিলা। তিনি জানান, ওই যুবক অচৈতন্য অবস্থায় রাস্তার ধারে পড়ে আছেন। তাঁকে তোলা যাচ্ছে না। তাই তিনি তাঁদের আর এক বন্ধুকে ফোন করে ডেকেছেন। ওই বন্ধু এসে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন ওই যুবককে। শুনে সন্দেহ হয় ওই যুবকের স্ত্রীর। তড়িঘড়ি তিনি ঘটনাস্থলে এসে দেখেন, রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছেন তাঁর স্বামী। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
শনিবার গভীর রাতে নেতাজিনগরে গাঙ্গুলিবাগানের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শাশ্বত সাউ (৩৩)। বাড়ি ঠাকুরপুকুরে। রবিবার তাঁর ওই বান্ধবীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের স্ত্রী অমৃতা বারদিয়া সাউ। তাঁর দাবি, ওই মহিলার গাফিলতিতেই শাশ্বতবাবুর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ মহিলার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, অতিরিক্ত মদ্যপানেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে শাশ্বতবাবুর। যুবকের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ডেকে পাঠানো হয়েছে মৃতের তিন বন্ধুকেও। যাঁর মধ্যে ওই মহিলাও রয়েছেন। তদন্তকারীরা জানান, গাফিলতি মিললে গ্রেফতার করা হবে তাঁকে।
পুলিশকে অমৃতাদেবী জানান, শাশ্বতবাবু একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ওই দিন রাত আটটা নাগাদ সল্টলেকের করুণাময়ীতে ইন্টারভিউ ছিল। অভিযোগপত্রে তাঁর দাবি, রাত ১১টার পরে শাশ্বতবাবু ফোন করে জানান, তিনি অন্য এক সহকর্মীর সঙ্গে একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু মাঝরাতেও স্বামী না ফেরায় অমৃতাদেবী সাড়ে ১২টা নাগাদ ফোন করেন তাঁর মোবাইলে। তখনই তাঁর সঙ্গে কথা হয় শাশ্বতবাবুর ওই বান্ধবীর। তদন্তকারীরা জানান, বিপদ আঁচ করেই অমৃতাদেবী ফোন করেন শাশ্বতবাবুর সেই বন্ধুকে, যাঁকে খবর দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর বান্ধবী দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি অমৃতাদেবীকে জানান, শাশ্বতবাবুর অসুস্থ হওয়ার খবর জানেন না। কেউ তাঁকে ফোন করেননি। শাশ্বতবাবু সুস্থ অবস্থায় রাতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ লেক টাউনে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন। পুলিশ জানায়, এর পরেই অমৃতাদেবী ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ইন্টারভিউয়ের পরে বন্ধু এবং সহকর্মীদের নিয়ে সেক্টর ফাইভে পার্টি করেন শাশ্বতবাবু। সেখানে মদ্যপান করার পরে অ্যাপ-ক্যাব বুক করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সঙ্গে ওই মহিলাও ছিলেন। গাঙ্গুলিবাগানে ওই মহিলার বাড়ির কাছেই অসুস্থ হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন শাশ্বতবাবু। পুলিশের কাছে অমৃতাদেবীর দাবি, ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর স্বামী বেঁচে যেতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।