দেখা নেই পর্যাপ্ত বাসের, হয়রানি নিত্যযাত্রীদের

এ যেন মূল অসুখ চিহ্নিত না করে ক্ষতে সাময়িক প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা। সল্টলেকে প্রায় ৫৪ বছরের পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের। কোথাও বাস একেবারেই নেই, কোথাও বা মন্দের ভাল।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৮:৩৪
Share:

এ যেন মূল অসুখ চিহ্নিত না করে ক্ষতে সাময়িক প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা।

Advertisement

সল্টলেকে প্রায় ৫৪ বছরের পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের। কোথাও বাস একেবারেই নেই, কোথাও বা মন্দের ভাল। ভরসা সেই অটো কিংবা রিকশা। ভোর, দুপুর অথবা রাতে অবস্থা আরও করুণ বলে অভিযোগ। তুলনায় অফিসের ব্যস্ত সময়ের ছবিটা কিছুটা উজ্জ্বল।

এলাকাবাসীর দাবি, এক-দু’দিন নয়, জন্মলগ্ন থেকেই চলছে এই সমস্যা। সরকার আসে, সরকার যায়। প্রতিশ্রুতি পাল্টায়। কিছু কিছু কার্যকরীও হয়। বদলায় না শুধু ভোগান্তির ছবিটা।

Advertisement

কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থার এই বেহাল দশার উন্নতি হয় না কেন? প্রশাসন বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাসের রুট এবং সংখ্যা, দুই-ই বেড়েছে। তাই ছবিটা অনেকটা বদলেছে বলেই তাঁদের দাবি।

সত্যিই কি তাই? বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে। পরিকল্পিত উপনগরী সল্টলেক পাঁচটি সেক্টরে বিভক্ত। ৭২টি ব্লক এবং প্রায় আড়াই লক্ষ জনসংখ্যা। রাস্তাও প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি।

অথচ সল্টলেকে বাস রুটগুলি মূলত ডিডি ব্লকের অফিসপাড়া ও পাঁচ নম্বর সেক্টরমুখী। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন বাইরে থেকে সল্টলেকের অফিসপাড়া বা পাঁচ নম্বর সেক্টরে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। ফলে দিনের অধিকাংশ সময়ে বাসে ওঠার উপায় থাকে না। কিন্তু অফিসের ব্যস্ত সময় বাদ দিলে দুপুরে কিংবা রাতে সেই সব রুটে বাসের সংখ্যা কমে যায়। তা ছাড়া, সল্টলেকের চারটি সেক্টরের মধ্যেও পরিবহণ ব্যবস্থার কোনও ভারসাম্য নেই। অধিকাংশ বাসের গন্তব্য করুণাময়ী বা পাঁচ নম্বর সেক্টর। উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে পিএনবি মোড়, বৈশাখী হয়ে অথবা পিএনবি মোড় থেকে সিএ আইল্যন্ড কিংবা বিদ্যাসাগর মোড় থেকে করুণাময়ী হয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টর রুটে চলে বেশির ভাগ বাস। কিন্তু বৈশাখী মোড় থেকে ২ নম্বর সেক্টরের একাধিক ব্লকের জন্য চলে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বাস। আবার উল্টো দিকে বিদ্যাসাগর মোড় থেকে লাবণি, ফাল্গুনী, এফডি ব্লক থেকে কেবি-কেসি আবাসনের মধ্যেও বাসের রুট এবং সংখ্যা কমবেশি এক।

উপরন্তু পুরনো বেশ কিছু রুটও বন্ধ হয়ে রয়েছে। যেমন বন্ধ এল ১৪এ-বি-সি, এস ১৪, যাদবপুর-সল্টলেক, শাটল ৯, এস-১৯, এস ২৩, ৩৯এ, ১৩বি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটের বাসগুলি। বাসিন্দাদের দাবি, ওই রুটগুলি এমন ভাবে বিন্যস্ত ছিল, যাতে প্রতি সেক্টরের লোকজন যাতায়াত করতে পারতেন।

বিধাননগর পুরসভা পরিবহণ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়ে এস ১৬-সহ বেশ কিছু রুটে বাস চালু হয়েছিল। কিন্তু তার সংখ্যা এতই কম এবং বাসের সময়সীমা এতটাই অনিয়মিত যে, কেউ তার উপরে ভরসা করতে পারেন না। কোনওমতে চলছে বেসরকারি সংস্থার একাধিক রুটও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধর্মতলা, হাওড়া, দক্ষিণ কলকাতা কিংবা ব্যারাকপুর, ডানলপ থেকে সল্টলেকে রাতে যাতায়াত করতে গেলে এক-দু’বার বাস বদল করতে হয়।

তবে সল্টলেকের চার নম্বর সেক্টর মূলত যা সংযুক্ত এলাকা বলেই পরিচিত, সেখানে বাস চলাচলের মতো পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। ফলে সেখানে একটি মাত্র রুটের অটো ছাড়া পরিবহণের অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই।

সরকারি-বেসরকারি বাস কর্মচারীদের একটি অংশের দাবি, অফিসটাইম বাদ দিলে সল্টলেকে বাস চালিয়ে লাভ হয় না। অফিসযাত্রীরাই ভরসা। তাই ভোরে, দুপুরে কিংবা রাতের দিকে দু’টি বাসের যাতায়াতে সময়ের ব্যবধান বেড়ে যায়।

বাসিন্দাদের দাবি, পরিবহণ দফতর আগে সমীক্ষা করুক। কোথাও কত চাহিদা রয়েছে, সেই তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন। সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের এক কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘সল্টলেকের মতো পরিকল্পিত উপনগরীর পরিবহণ ব্যবস্থা কী ধরনের হবে, তা নিয়ে স্থায়ী পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’

সম্প্রতি বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছেন, ব্যাটারি চালিত বাস চালানোর বিষয়ে পরিকল্পনা হয়েছে। বিধাননগর পুরনিগমের মধ্যে ইন্টারসিটি বাস হিসেবেই সেগুলিকে চালানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।

পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, আগে এই ধরনের সমস্যার মোকবিলায় যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে সাফল্য সে ভাবে আসেনি। ফের বিভিন্ন নিগমকে একত্রিত করে সার্বিক একটি সুসংহত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাতে সল্টলেকের মতো একাধিক এলাকায় পরিবহণের সমস্যা কমবে বলেই তাঁর আশা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement