কমিটির সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজোর সময়ে মণ্ডপের বিভিন্ন কাজে ওয়ারিশ, জুম্মান বা ওবাইদুররা সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আবার মহরম, ইদ বা রমজান মাসে তাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকেন অরুণ, বীরবল, সুরজিৎ বা প্রতাপেরা। হিন্দু-মুসলিম, দুই সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র হিসেবে বরাবরই নজির তৈরি করে এসেছে কলকাতা বন্দর এলাকার নাদিয়াল। এ বারের রমজান মাসও তার ব্যতিক্রম নয়।
বিভিন্ন উৎসবে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাক দেওয়ার রীতি গত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে নাদিয়ালে। এ বছর সেই আয়োজনে একটু বদল আনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, বাড়িতে বাড়িতে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হবে পোশাক। তাই এখন পোশাক গোছানোর কাজে দিনরাত মগ্ন সেখানকার পিস কমিটির সদস্যেরা। শুধু তা-ই নয়, ব্যাঙ্ক থেকে নাদিয়াল এলাকার দরিদ্র বাসিন্দাদের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কাজও করছেন পিস কমিটির সদস্যেরা। ওই কমিটির এক যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশের কথায়, ‘‘এলাকায় দুই ধর্মের মানুষই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেঁচে আছেন। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের শিক্ষার হারটা কম। কিন্তু দরিদ্র মানুষদের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কাজটা পিস কমিটির সদস্যেরা করছেন। খুব শীঘ্রই চারটি পরিবারের হাতে ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া টাকা তুলে দেওয়া হবে।’’
মেটিয়াবুরুজের নাদিয়ালে মুসলিম ধর্মের মানুষের বসবাসই বেশি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা পনেরো শতাংশের মতো। এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখতে কয়েক বছর আগে নাদিয়াল থানার উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘পিস কমিটি’। কমিটির উদ্যোগেই উভয় ধর্মের উৎসবে উঠে আসে নানা সম্প্রীতির ছবি। দীর্ঘ এক মাসের রমজানের শেষে উদ্যাপিত হবে খুশির ইদ। সেই উপলক্ষে এলাকার দরিদ্র মুসলিম পরিবারগুলির কাছে কমিটির তরফে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নতুন পোশাক। পিস কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রুদ্রেন্দু পালের কথায়, ‘‘ইদ বা দুর্গাপুজো প্রত্যেক বাঙালির উৎসব। উৎসবের সময়ে একে অপরের পাশে থাকার রেওয়াজ আগেও ছিল। আমরা সেই ধারা বহন করছি।’’
গত দু’বছরে লকডাউনের সময়েও বকরি ইদ, মহরম, দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন নাদিয়ালের বাসিন্দারা। নাদিয়াল থানার ওসি ময়ূখময় মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে বললেন, ‘‘নাদিয়ালের হিন্দু-মুসলিম বাসিন্দারা বিভিন্ন উৎসব যে ভাবে একসঙ্গে পালন করেন, তা বড় মধুর। এটাই আমাদের গোটা দেশের ছবি হওয়া দরকার।’’