প্রতীকী ছবি।
হৃদ্যন্ত্র থেকে শুরু করে শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শরীরের যে দিকে থাকার কথা, তা নেই ৪৫ বছরের মহিলার। বরং সেগুলি রয়েছে উল্টো দিকে। যার জেরে তাঁর পিত্তনালি থেকে পাথর বার করতে সমস্যা হচ্ছিল। ইআরসিপি পদ্ধতিতে দু’বার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। অবশেষে পেট কেটে জটিল সেই অস্ত্রোপচার করে রোগিণীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিল কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
কামারহাটির আনোয়ার বাগানের বাসিন্দা হালিমা বিবি দীর্ঘদিন ধরেই পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। খাবার খেতে সমস্যা হচ্ছিল। পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর পিত্তনালিতে পাথর রয়েছে। আবার ২০১০ সালে হালিমার পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়েছিল। সেই সময়ে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করে তা বার করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পুনরায় ওই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করায় সমস্যা ছিল। পিত্তনালিতে পাথরের সমস্যা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে গেলেও সেখানে বার দুয়েক ইআরসিপি পদ্ধতিতে পাথর বার করার চেষ্টা সফল হয়নি।
তখন বাড়ির কাছেই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে যান হালিমা। সেখানকার শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, ‘‘এক বার যে জায়গায় অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেখানে পুনরায় কাটাছেঁড়া করা সমস্যার ছিল। তার উপরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উল্টো দিকে, অর্থাৎ মিরর ইমেজ ছিল। সে ক্ষেত্রে এমনিতেই অস্ত্রোপচারে সমস্যা হয়। তাই চিন্তা ছিল, পিত্তনালি পর্যন্ত পৌঁছনো এবং সব পাথর বার করা যাবে কি না।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জন্মগত ভাবেই হালিমার বুক ও পেটের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থান রয়েছে উল্টো দিকে, চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘সাইটাস ইনভার্সাস’।
সম্প্রতি মানসবাবু ছাড়াও চিকিৎসক সৌমিত্র দে এবং অ্যানাস্থেটিস্ট মাধুরীরঞ্জনা বিশ্বাস ও নৈঋতা ময়ূরের দল প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে সব পাথর বার করেন। এমনকি, ভবিষ্যতে পুনরায় পাথরের সমস্যা এড়াতে পিত্তনালির সঙ্গে খাদ্যনালির উপরের অংশ (ডুয়োডেনাম) জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন হালিমা।