প্রতীকী ছবি।
নিমতায় চিকিৎসক-নিগ্রহের প্রতিবাদে মঙ্গলবার স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে, সাদা এপ্রন পরে পথে নামলেন কয়েকশো চিকিৎসক। প্রথমে থানায় স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা। পরে নিগৃহীত চিকিৎসক গৌরব রায়কে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। পাঁচ দিনের মাথায় বাড়ি ফিরে গৌরব বললেন, ‘‘আতঙ্ক আছে। তবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যে আশ্বাস পেয়েছি, তাতে ভরসা রাখছি। সর্বোপরি, বরিষ্ঠ চিকিৎসকেরা পাশে রয়েছেন। বাড়ি ফিরতে পেরে ভালই লাগছে।’’
গত ১৫ এপ্রিল নিমতা বাজার এলাকার বাসিন্দা পাপ্পু কুণ্ডুর আচমকা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হয়েছিলেন পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার গৌরব। ওই চিকিৎসকের বাড়ি ভাঙচুর, তাঁকে এবং তাঁর পরিজনদের বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযোগ তোলা হয়, প্রতিবেশী পাপ্পুর বুকে ব্যথা হওয়ার খবর জানানো হলেও আসেননি গৌরব। বরং পাপ্পুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পথে অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তার পর থেকেই বাড়িছাড়া ছিলেন গৌরব।
অভিযুক্তদের গ্রেফতারি এবং গৌরবকে বাড়ি ফেরানোর দাবিতে এ দিন নিমতা থানায় পৌঁছন চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর প্রতিনিধিরা। পরে তাঁরা গৌরবকে নিয়ে পৌঁছন নিমতা হাইস্কুল মোড়ে। সেখান থেকে শ’খানেক চিকিৎসক মিছিল করে গৌরবকে বাড়িতে নিয়ে যান। যদিও এখনও পাড়ায় গৌরবের শাস্তি চেয়ে পোস্টার ঝুলছে। চিকিৎসকের বাড়ির সামনে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। গৌরব বলেন, ‘‘পাপ্পুর মৃত্যুতে আমিও শোকাহত। আমার উপরে স্থানীয়দের রাগ রয়েছে বুঝতে পারছি। কিন্তু তাঁরা বুঝতে চাইছেন না যে, হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সেটাই ওঁদের বলেছিলাম।’’
এ দিন নিমতা থানা ও গৌরবের বাড়িতে যান উত্তর দমদমের চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসককে নিগ্রহ করা উচিত নয়। তাঁর পরিবারের যাতে আর সমস্যা না হয়, দেখা হচ্ছে।’’
পাপ্পুর পরিজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে গৌরবের বিরুদ্ধে ৩০৪এ ধারায় (গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটানো) মামলা রুজু হয়েছে। এ দিন থানায় স্মারকলিপি জমা করে ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর তরফে চিকিৎসক কৌশিক চাকী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার বিষয়টি পুলিশকে বলেছি। ওঁরা জানিয়েছেন, ঘটনার পরে দুই তরফেই অভিযোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। অভিযুক্তদের মধ্যে পরিচিত মুখ কারা, তা-ও পুলিশকে বলা হয়েছে।’’
গৌরব ও তাঁর পরিবারের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা, ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক পরীক্ষা, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের দাবিও জানানো হয়েছে। এলাকার অন্যান্য চিকিৎসকদের চেম্বারে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের দাবি শুনেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’