সুচিত্রা মিত্রের স্মরণে রবিতীর্থ প্রাক্তনী আয়োজিত অনুষ্ঠান। সোমবার আইসিসিআর-এ।
সময়ের অভাবে তাঁর সঙ্গীত সাধনা করা হল না বলে আক্ষেপ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস’-এ রবিতীর্থ প্রাক্তনী আয়োজিত সুচিত্রা মিত্র স্মরণসভায় মমতা বলেন, “আমি হয়তো নিজে সময় পাই না সঙ্গীত সাধনার। কিন্তু গানই আমার প্রাণ। গান ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। আমার গাড়িতে কোনও গান না চললে আমি যেতে পারব না। গান চললে হাজার হাজার কিলোমিটার অনায়াসে চলে যাব।”
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গান অন্যতম শিল্প। শিল্পপতিদের সম্মেলনে তিনি শিল্পপতিদের মঞ্চে ডেকে এনে গান গাইয়েছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত বা টলিউডি গানের অনুষ্ঠানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে গান শুনেছেন। গানের প্রতি ভালবাসা কোনও দিন গোপন করেননি। এখনও সুযোগ পেলেই সমবেত গানে গলা মেলান, তা সে জনগণমন অধিনায়ক হোক বা ধনধান্যপুষ্পভরা। বক্তৃতায় বিভিন্ন গানের পংক্তি উদ্ধৃত করাও তাঁর অভ্যাস। এ দিনের অনুষ্ঠানেও বার কয়েক বিভিন্ন রবীন্দ্রসঙ্গীতের পংক্তি বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কলকাতার রাস্তার সিগন্যালে গান বাজানো শুরু হয়। এক সময়ে নিজে সিন্থেসাইজার বাজাতেন। এখনও গান লেখেন। তাঁর লেখা ছড়ার গানের সিডিও বেরিয়েছে। প্রথাগত সঙ্গীতশিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও বহু নামী সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীর সামনে গান গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অনেকের মতে, মমতার গলা চড়া সুরে ভাল খেলে।
এ হেন মমতা এ দিন অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “এমন অনুষ্ঠান আজকাল অনেক কম হয়। আমরা অনেক বড় অনুষ্ঠানে যাই। কিন্তু এই ধরনের অনুষ্ঠান থেকে জন্ম হয় কোনও ফেলে আসা দিনের স্মৃতির সরণিতে থাকা সুর, প্রাণের স্বাচ্ছন্দ্য। এই অনুষ্ঠান আমার ভীষণ ভাল লেগেছে।” রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর জীবনের কতটা জুড়ে আছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “যেখানেই থাকি না কেন, একটা শব্দ, একটা কথা, একটা সুর মনে পড়বেই।”
চিন্তামগ্ন। আইসিসিআর-এ সুচিত্রা মিত্রের স্মরণসভায় মুখ্যমন্ত্রী।
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সুচিত্রা মিত্রের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে বর্ষব্যাপী উদ্যাপনের সূচনা হয় এ দিনের অনুষ্ঠানে। সেখানেই সুচিত্রা মিত্রের নামে কলকাতায় একটি রাস্তার নামকরণের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনাপ্রক্রিয়ায় এ দিন বেশ চমক ছিল। মঞ্চে আসীন মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই সুচিত্রাকন্যা সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায় তাঁর মায়ের নামে একটি রাস্তা বা উদ্যানের নামকরণের অনুরোধ রাখেন। বলেন, “এটা হলে শুধু আমাদের নয়, প্রত্যেক বাঙালির কাছেই আনন্দের বিষয় হবে। আশা করি মাকে নিয়ে যে কোনও ভাল কাজে আপনার সহযোগিতা পাব।”
সুদেষ্ণাদেবীর কথা শেষ হওয়ার আগেই মঞ্চে বসে মোবাইলে কথা বলা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলতে-বলতে সাইডস্ক্রিনের পিছনে মিনিট তিনেকের জন্য অদৃশ্য হয়ে যান। ফিরে এসে মমতা বলেন, “সুদেষ্ণা ছোট্ট একটি অনুরোধ রেখেছে। সে জন্যই এক মিনিট বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কলকাতার মেয়রের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললাম। তাঁকে একটি রাস্তার নাম সুচিত্রা মিত্রের নামে রাখতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি কথা দিয়েছেন তা করবেন। আগামীকাল থেকেই কাগজ মুভ করবে।”
ছবি: সুদীপ আচার্য