যানজটে অবরুদ্ধ ধর্মতলা। বুধবার। — দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
‘দিদি’র সভার জেরে গাড়ির চাপ বেড়ে গিয়েছিল রাস্তায়। তার উপরে শ্যামবাজারে ‘বিগ বি’-র শ্যুটিং। যার জন্য কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ফলে কাজের দিনে উত্তর থেকে দক্ষিণ, থমকে গেল মহানগরের গতি। প্রজাতন্ত্র দিবসের ছুটি কাটিয়ে পথে বেরোতেই নাকাল হলেন কয়েক হাজার মানুষ। পুলিশ অবশ্য বলছে, শুধু এই দু’টি-ই নয়, শহরে এ দিন বিভিন্ন রাস্তায় অন্তত আটটি সভা-অনুষ্ঠান ছিল। সে সবের জেরেও কমেছে রাজপথের গতি।
এই পরিস্থিতির ময়না-তদন্ত করার পরে লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, কয়েকটি অনুষ্ঠান অনুমতি ছাড়া হয়েছে। আবার বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারণাই ছিল না তাদের। তাই কোথায়, কত লোক জমা হলে পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা-ও আঁচ করা যায়নি। সাধারণত, রাজনৈতিক সভা-মিছিলের ক্ষেত্রে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ থেকে আগাম খবর যায় লালবাজারে। তার ভিত্তিতেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তবে কি কলকাতা পুলিশের অন্দরেই সমস্যা হচ্ছে সমন্বয় নিয়ে? এ দিন লালবাজারের মন্তব্যে এমনই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুলিশকর্তারা।
আজ, বৃহস্পতিবারও শহরে যানজটের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না লালবাজার। তারা জানাচ্ছে, সিপিএম লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছে। আরও কয়েকটি সভা-মিছিল রয়েছে। একই দিনে এতগুলি মিছিলের ফলে যানজটে ভুগতেই হবে মানুষকে।
২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস। এ যাবৎকাল সে দিনই রেড রোডে কুচকাওয়াজ হয়েছে। সেনা, আধা-সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কুচকাওয়াজে সামিল হয় রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ। এ বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, ২৬ জানুয়ারির পাশাপাশি রাজ্যের নিজস্ব একটি কুচকাওয়াজ হোক। সেই ইচ্ছে মেনেই বুধবার রেড রোডে কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছিল রাজ্য প্রশাসন।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর বারোটা থেকেই রেড রোডে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডিএল খান রোড, আলিপুর, খিদিরপুর থেকে ধর্মতলামুখী গাড়ি এক্সাইড মোড় হয়ে জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে পাঠানো হয়। বিদ্যাসাগর সেতু থেকে বহু গাড়িকেই খিদিরপুর রোডের দিকে যেতে দেওয়া হয়নি। এ জে সি বসু রোড হয়ে এক্সাইড মোড়ের দিকে পাঠানো হয় সেগুলিকে। বেশ কিছু মোটরবাইক খিদিরপুর রোডে নামলেও ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে সেন্ট জর্জেস গেট রোড, স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে শহরে ঢুকেছে। পার্ক সার্কাস এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল দিয়ে যে সব গাড়ি এসএসকেএমের সামনে নেমেছিল, তার কিছু গাড়িকে ঘুরিয়ে এক্সাইডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছু গাড়ি সোজা গঙ্গার পাড় ধরে মধ্য কলকাতায় যায়।
পুলিশ বলছে, এমনিতেই জওহরলাল নেহরু রো়ডে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। রেড রো়ড এবং আশপাশের রাস্তার গাড়িও জওহরলাল নেহরু রোডে এসে হাজির হওয়ায় গাড়ির গতি থমকে গিয়েছিল। জওহরলাল নেহরু রো়ড এবং পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের উপরে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ডোরিনা ক্রসিংয়ে ট্রাফিক পুলিশের অফিসারেরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর গাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কাজে দেয়নি। কেন?
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনই শ্যামবাজার মোড়ে অমিতাভ বচ্চনের শ্যুটিং ছিল। তার ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। শ্যুটিং দেখতে জমে গিয়েছিল উৎসুক লোকজনের ভিড়ও। সব মিলিয়ে যানজট তৈরি হয়েছিল। পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, শ্যামবাজারের যানজট ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ হয়ে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ পর্যন্ত চলে এসেছিল। তার ফলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে গাড়ি এগোতে পারছিল না। যানজটের কবলে পড়েছিল এপিসি রোড, বিধান সরণিও। এই রাস্তাগুলিতে যানজট থাকায় মধ্য কলকাতা থেকে গাড়ি এগোতে পারেনি। এ দিন শ্যামবাজারের জন্য ভুগেছে চিড়িয়ামোড়, আরজি কর রোড-ও।
বিকেল তিনটে নাগাদ এই দুই অনুষ্ঠান শেষ হলেও যানজট পিছু ছাড়েনি কলকাতার। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের সামনে একটি সভায় কয়েক হাজার লোক জড়ো হওয়ায় কলেজ স্ট্রিট, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিটের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দুপুরে এক বার কলেজ স্কোয়ারে অবরোধ হয়েছিল। তা সামলে উঠতে না-উঠতেই ফের এই সভার জেরে গোটা যান চলাচল ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।’’ প্রশ্ন উঠেছে, একই দিনে মুখ্যমন্ত্রীর কুচকাওয়াজ ও ‘বিগ বি’-র শ্যুটিং দেওয়া হল কেন? কেনই বা এক সঙ্গে এতগুলি অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে?
কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, অমিতাভের শ্যুটিংয়ের জায়গা ছিল শ্যামবাজারের এক বাজারের ভিতরে। তাই মনে করা হয়েছিল, তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু খবর চাউর হতেই যে ভাবে ভিড় বাড়তে শুরু করে, তাতে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল। লালবাজারের কর্তাদের দাবি, ২৯ জানুয়ারির পরে মাধ্যমিকের জন্য মাইক বাজানো যাবে না। তাই অনেকেই সভা-মিছিলের দিন এগিয়ে আনছে। গোলমাল এড়াতে অনুমতি দিচ্ছে পুলিশও।