সুনসান বাগুইআটি মাছ-বাজার। বৃহস্পতিবার। — সুমন বল্লভ
বাতিল নোট নিয়ে বুধবার ছিল প্রবল আতঙ্ক। বহু মানুষ ৫০০ টাকার নোট নিয়ে বাজারে গেলেও বিক্রেতারা অধিকাংশই নিতে চাননি। তাঁদের উত্তর ছিল— ভাঙানি কোথায় পাব!
বৃহস্পতিবার কিছুটা হলেও তার উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে শহরের বিভিন্ন বাজারে। বেশ কিছু জিনিস যেমন আলু, সব্জি, মাছ তো দিনের পর দিন মজুত করে রাখা যায় না। বাধ্য হয়ে অনেকেই ৫০০ টাকার নোট নিয়ে জিনিস বিক্রি করেছেন। বিক্রিবাটা হলেও এ দিন উত্তর থেকে দক্ষিণ— প্রতিটি বাজারের হাল ছিল বেশ করুণ। ক্রেতা নামমাত্র। মাছের বাজারে মাছ প্রায় নেই বললেই চলে। সব্জিও তথৈবচ। যাঁর কাছে যেটুকু ছিল, তাঁকে সেটুকুই বিক্রি করে ঘরে টাকা তুলতে হয়েছে। আর সেই সুযোগে কিছু মানুষ ৫০০ টাকার নোট ভাঙাতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।
নাগেরবাজার উড়ালপুলের নীচে রোজ মাছ বিক্রি করেন অসিত মণ্ডল। এ দিন প্রায় কেজি পনেরো ছোট-বড় ভেটকি নিয়ে বসেছিলেন। দাম ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি। অসিতবাবু জানালেন, যতক্ষণ তাঁর কাছে ৫০০-র নোট ভাঙানোর মতো টাকা ছিল, ততক্ষণ কাউকে ফেরাননি। সবাইকেই মাছ বিক্রি করেছেন। কিন্তু বেলা বাড়তেই ১০০ টাকার নোট শেষ। ফলে দোকানের মাছ দোকানেই পড়ে। তাঁর আফশোস, আড়তে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিচ্ছে। ফলে মাছও কেনা যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে খুচরো বাজারে। তা-ও এ দিক-সে দিক থেকে ১০০ টাকার নোট জোগাড় করে কিছু মাছ বিক্রি করেছেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সল্টলেক, মানিকতলা, লেক মার্কেট, যাদবপুর, টালিগঞ্জ— প্রতিটি বাজারেই ব্যবসায়ীদের একাংশ বাধ্য হয়েছেন ৫০০-র নোট নিতে। পরিবর্তে ক্রেতাদের বেশি টাকার জিনিস কিনতে হয়েছে। মুদিখানা ও মাছ বাজারে ক্রেতারা কিছুটা হলেও টাকা ভাঙাতে পেরেছেন। সব্জি বাজারে অবশ্য ৫০০-১০০০ টাকার নোট চলেনি।
অধিকাংশ বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির যুক্তি অনেকটা এক। তাঁদের কথায়, দোকান খুললে প্রথম দিকে ৫০-১০০ টাকার কিছু বিক্রি হচ্ছে। কিছু টাকা হাতে জমলে তবেই ৫০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দিয়ে জিনিস বিক্রি করা হয়েছে। তাতে উভয়েরই লাভ হয়েছে। জিনিস বিক্রিও হয়েছে, ক্রেতারাও দু’-তিনটি করে ১০০-র নোট পেয়েছেন।
মানিকতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দাস জানান, বুধবার ব্যবসায়ীরা কিছুটা দোলাচলে ছিলেন। বেশি ৫০০, ১০০০-র নোট হলে যদি ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে সমস্যা হয়। সেই ভাবনাটা অনেকটাই বদলেছে। বেশি টাকার মাছ বা অন্য জিনিস কিনলে ৫০০, ১০০০-র টাকার নোট ভাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রভাতবাবুর দাবি, তাঁদের সংগঠনের তরফে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, ভাঙানি করে দেওয়ার সুযোগ থাকলে ক্রেতাদের না ফেরাতে। যাঁরা বেশি টাকার জিনিস কিনবেন, তাঁদের খুচরো করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানান, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই তাঁরা আড়তে ৫০০-১০০০ টাকার নোট আনলে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মাছ কিনতে না পারলে খুচরো বাজারে সমস্যা হবে। যাঁরা একসঙ্গে বেশি মাছ কেনেন, তাঁদের ধারে মাছ দেওয়া হচ্ছে। তবে বাতিল নোটের সমস্যার কারণে অনেক ব্যবসায়ী মাছ কিনছেন না। ফলে খুচরো বাজারে আকাল থেকেই যাচ্ছে।
এ দিন বাঙুর, লেকটাউন, সল্টলেকের কয়েকটি ব্লকের বাজার-সহ মানিকতলা ও দক্ষিণের লেক মার্কেট, গড়িয়াহাট বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশ ফাঁকা। ক্রেতা কম থাকায় ব্যবসায়ীরাও গল্পে মশগুল। পরিচিত কোনও ক্রেতা ৫০০, ১০০০ টাকা নিয়ে নিয়ে ঢুকলে ঠাট্টাচ্ছলে কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন, ৫০০ টাকা কেজি গলদা চিংড়ি কিনলে ১০০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দেওয়া হবে। মুরগির দোকানের অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ২ কেজি চিকেন কিনলেই ৫০০ টাকা ভাঙিয়ে দেওয়া হবে।
তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আজ, শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি সামান্য হলেও বদলাবে। কারণ এ দিন অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পেরেছেন। একই সঙ্গে আজ খুলছে এটিএম। ফলে খুচরোর আকাল কিছুটা হলেও কমবে।