পুরভবনে বৈঠকে মেয়র ও অন্য পদাধিকারীরা। — নিজস্ব চিত্র।
শহরের অনেক রাস্তায় তাঁর নিয়মিত যাতায়াত নেই ঠিকই। কিন্তু ওই সব রাস্তার হাল হকিকত যে তাঁর নজরে রয়েছে, সম্প্রতি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
শহরের কোন রাস্তার সংস্কার প্রয়োজন, কোন রাস্তায় ঢালাইয়ের দরকার— এ নিয়ে একটি তালিকাও তৈরি করেছেন তিনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দিন পাঁচেক আগে তা পাঠিয়ে দিয়েছেন পুরভবনে। এর জেরেই মঙ্গলবার পুরভবনে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ পূর্ত, রাস্তা, সেচ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো রাস্তার তালিকা ধরে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
শারদোৎসব আসন্ন। প্রতি বারই পুজোর আগে শহরের রাস্তায় ‘তাপ্পি মারা’র কাজ করে পুর-প্রশাসন। এ বারও তেমন কিছু করার জন্য দিন কয়েক আগে পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আসতেই বদলে গেল প্রাক্ পুজোয় শুধুমাত্র তাপ্পি মারার পরিকল্পনা। এ দিন পুরভবনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া শহরের রাস্তার তালিকার ৫৭টির মধ্যে ৩২টি রাস্তার পুরো অংশে কাজ করতে হবে। ২২টি রাস্তা ঢালাই করা হবে। আর ৩টি রাস্তার খারাপ অংশ মেরামত করা হবে।
বৈঠকে আলোচনা হয় বন্দর এলাকার কয়েকটি রাস্তা নিয়েও। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, রাস্তার হাল খারাপ হওয়ায় দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এক পরিসংখ্যান দিয়ে পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশ জানিয়েছে গত এক বছরে ১৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বন্দর এলাকায়। চলতি মাসেই তিনটি দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।’’ ওই এলাকার কিছু রাস্তায় খানাখন্দ হয়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তাই জরুরি ভিত্তিতে তা সারানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো তালিকায় যে ৫৭টি রাস্তার উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে ৩২টি দেখভালের দায়িত্ব পুর-প্রশাসনের। বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে ৭টি রাস্তা। ৯টি পূর্ত দফতরের অধীনে এবং কেএমডিএ-র হাতে ৪টি। বাকি কোনওটা এইচআরবিসি, কোনওটা সেচ দফতরের হেফাজতে রয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত কাজ শুরু করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি রাস্তা সারাই শেষ করা হবে। তবে যে সব রাস্তায় পুরো কাজ করতে হবে, তা শেষ করতে পুজো পেরিয়ে যাবে বলে জানান মেয়র। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত রাস্তায় ঢালাইয়ের কাজ করার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের প্রস্তুতি নিতেও বলা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কিছু ট্রামলাইনের রাস্তাও ঢালাই করা হবে। উল্টোডাঙা রেল ব্রিজের নীচের রাস্তায় প্রায়ই জল জমে খানাখন্দ ভরে যায়। তাতে যান-চলাচলে অসুবিধা হয়। ওই পথও ঢালাই করা হবে বলে খবর।
পুরমন্ত্রী জানান, পুরসভার সুবিধার কথা ভেবেই কেএমডিএ-সহ একাধিক দফতরের অধীনে থাকা শহরের কিছু ছোট রাস্তার দায়িত্ব পুর-প্রশাসনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি জানান, শহর পুরসভার অধীনে। তাই তার মাঝে কিছু রাস্তা কেএমডিএ-র হাতে থাকলে পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছিল। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি ছোট ছোট রাস্তা পুরসভার হাতে দেওয়া হচ্ছে। তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর পুর-প্রশাসনকে আর্থিক সাহায্যও দেবে।