প্রতীকী ছবি।
বাগজোলা, কেষ্টপুর-সহ খালের দূষণ রোধে রাজ্যের মুখ্যসচিব একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করবেন। টাস্ক ফোর্সের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলার পাশাপাশি তার ব্যর্থতার দায়ও উল্লেখ করতে হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে পদক্ষেপও করতে হবে। চলতি সপ্তাহে খাল সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারকে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। যা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
কারণ, প্রকল্পের ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিক বা আধিকারিকবর্গকে ‘দায়ী’ করার দাবি বিভিন্ন মহল থেকে বহু দিন ধরে উঠছিল। বক্তব্য ছিল, প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কোনও প্রকল্পের রূপায়ণ বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী না করা পর্যন্ত সরকারের ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাব যাবে না। খাল সংক্রান্ত মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘দূষণ করলেই জরিমানা— রাজ্যের এই নীতি নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিককেও দায়ী করা হোক। না-হলে খালের দূষণের জন্য জনস্বাস্থ্যে খারাপ প্রভাবরোখা যাবে না।’’
টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি আদালত মুখ্যসচিবের উদ্দেশে আরও কিছু নির্দেশ দিয়েছে। সেগুলি হল, খাল সংলগ্ন উপযুক্ত স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো, নির্দিষ্ট সময় অন্তর উচ্চ স্তরের বৈঠক, অ্যাকশন প্ল্যান রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা। আদালতের নির্দেশ মেনে কতটা এবং কী কাজ হল, সেই সংক্রান্ত একটি অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কারণ, দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে কাম্য। এ বিষয়ে প্রশাসনকে তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত। আদালতের বক্তব্য, নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে জনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে প্রশাসনিক গাফিলতিই স্পষ্ট হবে।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ ২০১৬ সালে বাগজোলা ও কেষ্টপুর খালের দূষণ সরেজমিনে দেখেছিল। এর পরেই আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে। ওই মামলায় রাজ্যকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা রূপায়ণে ঘাটতি থাকায় চলতি সপ্তাহের নির্দেশে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করে আদালত। আদালত জানিয়েছে, জলাশয়, খাল, নদীর দূষণ রোধে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালনে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আদালতের ভাষায়— ‘বাস্তবটা হল, রাজ্যের ব্যর্থতা জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যে কারণে একমুখী হয়ে জরুরি পদক্ষেপ করার সময় এসেছে এবং বিভাগীয় সমন্বয়ের অভাব এড়াতে সর্বোচ্চ স্তরে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।’ ফলে খালের দূষণ রোধ করে রাজ্য সরকার প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা পালনে সফল হয় কি না, আপাতত সে দিকে তাকিয়ে অনেকে।