প্রস্তুতি: নতুন চাকা লাগানো হচ্ছে রথে। গুরুসদয় রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
জগন্নাথদেবের আগে দাদা বলভদ্রের রথের চাকাই পাল্টাচ্ছে এ বার রথযাত্রায়। রথের সাবেক লোহার চাকার তিনটি অক্ষত থাকলেও একটি একেবারেই ভেঙে গিয়েছিল। ফলে কাল, মঙ্গলবার ইস্কনের ৫২তম রথযাত্রার দিনেই বলরামের রথ তালধ্বজে নতুন চাকা গড়াবে রাজপথে। লোহার পেল্লায় চাকাটির ব্যাস ছ’ফুট, ওজন ২৫০ কেজি। যাত্রার প্রাক্কালে সেই চাকা রং করে রথের সঙ্গে গাঁথতে এক ঝাঁক শ্রমিক মিলে হিমশিম খাচ্ছিলেন। জগন্নাথদেবের রথের চাকাগুলিও পাল্টানোর সময় হয়েছে। কিন্তু তা এখনই বদলানো যাচ্ছে না বলে ইস্কনের কর্তারা জানাচ্ছেন।
জ্যৈষ্ঠ শেষের চড়া রোদে ইস্কনের কলকাতা কেন্দ্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস বলছিলেন, ‘‘কলকাতার রাস্তায় জগন্নাথদেবের রথ-সফর আরামপ্রদ করতে আমরা বোয়িং ৭৪৫ বিমানের চাকা ব্যবহার করি। এ চাকা সব রকম অভিঘাত সহ্য করতে পারে। কলকাতার ট্রাম রাস্তা, অসমান পথেও তা তরতরিয়ে এগিয়ে যাবে। তুলনায় বলরামের রথের লোহার চাকা ঘটঘট করতে করতে এগোয়। তবে জগন্নাথদেবের রথের চাকাও পাল্টানোর কথা ছিল। কিন্তু সবই প্রভুর নিজের ইচ্ছা।’’ ২০২১-এ ইস্কনের রথের ৫০তম বছরেই জগন্নাথের রথ নন্দীঘোষে সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা বসানোর কথা ভেবে রাখেন ইস্কন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই বার কোভিডের জন্য রথযাত্রাই হয়নি। কিন্তু এর পরে নতুন চাকা বসাতে গিয়ে দেখা যায়, সুখোইয়ের চাকার নকশা আলাদা। তা রথে গাঁথার লাঠির (অ্যাক্সেল) সঙ্গে আটকানো যাচ্ছে না। রাধারমণের কথায়, ‘‘কলকাতায় এত লোকের ভিড়ে নিরাপত্তার প্রশ্নে এক ফোঁটা আপস নয়। তবে কালে কালে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার তিনটি রথের ১২টি চাকাই আমরা পাল্টে ফেলব।’’
ইস্কনে আরাধ্য দেবদেবীর মধ্যে বিশেষ আদর জগন্নাথদেবের। এক শ্বেতাঙ্গ ভক্ত কোথা থেকে একটি ছোট জগন্নাথমূর্তি খুঁজে পেয়ে সান ফ্রান্সিসকোয় অভয় চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের কাছে নিয়ে আসেন। ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা প্রভুপাদ তখনই সুভদ্রা, বলরামকেও খুঁজে আনতে বলেন। সান ফ্রান্সিসকো এবং নিউ ইয়র্কের পরে ১৯৭১ থেকে কলকাতায় রথযাত্রা চালু হয় ইস্কনের। এখন তা ১৭০টি দেশের ৮০০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। রাধারমণ বলছিলেন, ‘‘কলকাতার আবহের সঙ্গে ধাতস্থ হতেও আমাদের সময় লেগেছে। কলকাতায় পুরীর মতো সোজা রাস্তায় রথ চলে না। ইস্কনের রথ চলার পথও পুরীর দ্বিগুণের বেশি (৮-৯ কিলোমিটার)।’’ ১৯৭৮-এ প্রভুপাদের দেহাবসানের পরে জনৈক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ভক্ত গ্যারি উইলিয়াম রবার্ট তথা মায়েশ্বর প্রভু এ শহরের উপযোগী রথ তৈরির ভার নেন। বড়দা বলরামের রথই সব থেকে উঁচু (৩৬ ফুট)। আর জগন্নাথের রথের চাকা সব থেকে ছোট এবং হালকা (৫০ কেজি) হয়েও চলাচলে সব থেকে মসৃণ। আবার তিনটি রথের চুড়োই ইচ্ছেমতো বড় গাছ বা বিদ্যুতের তারের সামনে সঙ্কুচিত হয়ে মাথা ঝোঁকাতে পারে। ইস্কন সূত্রের খবর, গত বছরই রথের একাংশের কাঠ বদলানো হয়েছে। ফলে এ বার নতুন সাজেই পথে নামছে রথ।
ইস্কন কর্তারা জানাচ্ছেন, কোভিড-পরবর্তী দুনিয়ায় ‘মানসিক শান্তি’ ফেরানোর বার্তা নিয়েই এ বার রথ নামছে। ৮০-৯০টি দেশের বিদেশি ভক্তেরাও রথ টানা থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবেন। হয়তো ইউক্রেন, রাশিয়ার ভক্তেরাও পাশাপাশি হরিনাম করবেন।