গাদাগাদি: বড়দিনের সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটমুখী মেট্রো। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
জলের স্রোতের মতো ধেয়ে আসা ভিড়ে থিকথিক করছে সাবওয়ে থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্ম এবং টিকিট কাউন্টার। মেট্রো স্টেশনের চারটি প্রবেশপথের দু’টি যাত্রীদের ঢোকার জন্য এবং বাকি দু’টি বেরোনোর জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরেও কলকাতা পুলিশ ও মেট্রোর আরপিএফের কর্মীরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন ভিড় সামাল দিতে।
সোমবার, বড়দিনে সন্ধ্যা সাতটায় এই ছবি পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের। কোন পথে ঢুকলে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনো যাবে এবং কোন পথ শুধুই মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, তা খুঁজে বার করতে গিয়ে হয়রান হলেন হাজার হাজার যাত্রী। সেই ভিড়ের চাপ বাইরে রাস্তার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলল। সাবওয়েতে আটকে থাকা এক যাত্রীকে
বলতে শোনা গেল, ‘‘এটা মেট্রো স্টেশন না শ্রীভূমির পুজো মণ্ডপ? একাই পুরো এলাকার ট্র্যাফিকের দমবন্ধ করে দিয়েছে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, বড়দিনের সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটের বেলাগাম ভিড় তো প্রতি বারের চেনা। তার পরেও মেট্রো স্টেশনে ঢোকা এবং বেরোনোর পথগুলির বিষয়ে যাত্রীদের আগাম জানানো হল না কেন? ভিড় সামাল দিতে পুলিশ এবং মেট্রোর রক্ষী পর্যাপ্ত থাকলেও পুরো বিষয়টিতে সমন্বয়ের অভাবই ফুটে উঠেছে।
এ দিন পার্ক স্ট্রিট এবং ময়দান স্টেশনের একাধিক প্রবেশপথ একমুখী করা হয়েছিল। পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ভারতীয় জাদুঘরের সামনে এবং তার উল্টো দিকে মেয়ো রোড সংলগ্ন প্রবেশপথ যাত্রীদের বেরিয়ে আসার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। অন্য দিকে, জওহরলাল নেহরু রোড এবং পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে দু’পাশের দু’টি গেট স্টেশনে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট করা ছিল। তার পরেও পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের সাবওয়ে দিয়ে যাত্রীদের দ্বিমুখী চলাচলের ভিড় সামলাতে জেরবার হয়েছেন মেট্রোর কর্মীরা। ভিড়ের মুখে মেট্রোকর্মীদের বালতি হাতে টোকেন ফেরত নিতে হয়েছে।
ভিড়ে বেসামাল অবস্থা চোখে পড়েছে ময়দান স্টেশনের জীবন দীপ এবং ইলিয়ট পার্ক সংলগ্ন প্রবেশপথেও। ভিড়ের চাপে যেমন বার বার বন্ধ করতে হয়েছে প্রবেশপথ, তেমনই যাত্রীদের রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে ছেদ পড়েছে যান চলাচলে।
পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন দিয়ে বেরিয়ে আসা ভিড়কে পুলিশ চিরকাল জীবন দীপ অথবা শেক্সপিয়র সরণি দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়। এর ফলে পার্ক স্ট্রিটে নেমে ঘোরার পরে যাত্রীরা মূলত ময়দান বা রবীন্দ্র সদন থেকে ফিরতি মেট্রো ধরেন। কিন্তু এ বার দুই স্টেশনেই বিপরীতমুখী ভিড় পরিস্থিতি জটিল করেছে বলে মনে করছেন মেট্রো আধিকারিকদের একাংশ।
সোমবার সারা দিন আট মিনিটের ব্যবধানে মেট্রো চলেছে। আধিকারিকদের একাংশের মত, সন্ধ্যার মুখে ট্রেনের ব্যবধান কমালে অথবা ময়দান স্টেশন থেকে ট্রেন চালালে হয়তো সমস্যা একটু কম হত। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ যাত্রী সফর করেছেন বলে জানান মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। রাত ১০টা পর্যন্ত সফর করেছেন গত বারের থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি যাত্রী। সাড়ে ন’টার পরে ধীরে ধীরে ভিড় কমে।