পাসপোর্ট পেতে হলে জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে এত দিন শুধু মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা জন্মের শংসাপত্র দিতে হতো। ১৯৮৯ সালের আগে যাঁদের জন্ম, তাঁদের ক্ষেত্রে দিতে হতো অ্যাডমিট কার্ড। আর যাঁদের জন্ম ১৯৮৯-এর পরে, তাঁদের ক্ষেত্রে জন্মের শংসাপত্র। এর ফলে সমস্যায় পড়ছিলেন সেই সব মানুষজন, যাঁদের এই দু’টির কোনওটিই ছিল না। এই সমস্যা এড়াতে সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রক নতুন নিয়ম করেছে, জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে অ্যাডমিট কার্ড বা জন্মের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক নয়। আধার কার্ড, প্যান কার্ড বা ভোটার কার্ডে জন্ম তারিখ লেখা থাকলে তা-ও প্রমাণপত্র হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
২৬ জানুয়ারি নতুন এই নিয়ম চালু হওয়ার পরে বেড়েছে পাসপোর্টের আবেদনের সংখ্যা। রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার (আরপিও) বিভূতিভূষণ কুমার জানান, জানুয়ারির পর থেকে গড়ে ৩০ শতাংশ বেশি আবেদন জমা পড়ছে। তা পরীক্ষা করে পাসপোর্ট হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ছুটির দিনে পাসপোর্ট মেলা করছে বিদেশ মন্ত্রক।
ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ এমন একটি পাসপোর্ট মেলা হয়েছিল। বিভূতিবাবু জানান, আগামী শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতা, বহরমপুর, আগরতলা ও গ্যাংটকে আবার এই মেলা বসবে। পাসপোর্ট দফতর জানায়, কলকাতায় ২ হাজার, বহরমপুরে ৫০০, আগরতলায় ৬৫ ও গ্যাংটকে ১০০ জনের আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে।
আজ, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিদেশ মন্ত্রকের পাসপোর্ট সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে ঢুকে নির্দিষ্ট ভাবে শনিবারের জন্যই আবেদন করতে হবে। টাকা জমা দিতে হবে অনলাইনেই। টাকা জমার রসিদ, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র নিয়ে শনিবার সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে যেতে হবে। মন্ত্রক জানিয়েছে, শুধু সাধারণ পাসপোর্ট ও তার নবীকরণের ক্ষেত্রেই এই আবেদন গ্রহণ করা হবে। তৎকালের ক্ষেত্রে হবে না।
নতুন এই নিয়ম কেন? বিভূতিবাবু বলেন, ‘‘অনেকের কাছেই মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা জন্মের শংসাপত্র নেই। তাঁদেরকে আদালতে গিয়ে হলফনামা দিয়ে কোর্ট পেপারে জন্মের তারিখ লিখিয়ে আনতে হতো। সেই ঝামেলা এড়াতেই বিদেশ মন্ত্রক ওই নিয়ম তুলে দিয়েছে।’’
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে ভারতে ঢুকে ঘুরপথে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড বানিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। এত দিন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অ্যাডমিট কার্ড বা জন্মের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাঁরা পাসপোর্ট পাচ্ছিলেন না। কেন্দ্রের নতুন সিদ্ধান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন না তো?
বিভূতিবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে তবেই পাসপোর্ট দেওয়া হয়। আবেদনকারী বাংলাদেশি কি না, পুলিশ সেটাই তদন্ত করে। ফলে, জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র সংক্রান্ত নিয়ম বদলে গেলেও পুলিশি তদন্তে প্রমাণ হয়ে যাবে আবেদনকারী ভারতের নাগরিক কি না।’’