Governor CV Ananda Bose on Jadavpur University Incident

উপেক্ষায় ক্ষুব্ধ বোস, তলব করলেন সব উপাচার্যকেই! ব্রাত্য বললেন, ‘ক্রমশ উনি কালিদাস হইয়া উঠিতেছেন’

শনিবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদ থেকে বুদ্ধদেব সাউকে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল। তার কিছু ক্ষণ পরে নাটকীয় ভাবে তাঁকে ‘পুনর্বহাল’ করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪২
Share:

(বাঁ দিক থেকে) সিভি আনন্দ বোস এবং ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

রাজভবন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অপসারিত অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়ের মধ্যে টানাপড়েনের আবহেই নয়া পদক্ষেপ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে জরুরি বৈঠকে ডাকলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। পাশাপাশি, আরও একটি বৈঠকের জন্য একটি ‘এমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্স’কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এ পাঠানো হচ্ছে। রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন শেষে রাজ্যপালের আবার একটি পদক্ষেপ নিয়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। অন্য দিকে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কটাক্ষ, ‘‘উনি (রাজ্যপাল) আস্তে আস্তে কালিদাস হইয়া উঠিতেছেন। যে গাছের ডালে বসছেন, সেটাই কাটতে চাইছেন।’’

Advertisement

শনিবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদ থেকে বুদ্ধদেবকে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল। তার কিছু ক্ষণ পরে নাটকীয় ভাবে তাঁকে ‘পুনর্বহাল’ করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। সমাবর্তনের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ‌্যপালকে তোপ দেগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত‌্য বসু বলেন, ‘‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে, উনি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব‌্যবস্থাকে ধ্বংস করতে নেমেছেন। যে কারণে উনি শুধু নির্বাচিত রাজ‌্য সরকারের পরামর্শ মানছেন না তাই নয়, সর্বোচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তী রায়কেও অশ্রদ্ধা করছেন। তাঁর দাঁত, নখ বেরিয়ে গিয়েছে।’’ এর মধ্যে সমাবর্তন শেষ হতেই রবিবার একটি বিবৃতি জারি করে রাজভবন। তাতে বলা হয়, মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপ করতে পারে না সরকার। এ-ও জানানো হয়েছে, যে সিভি আনন্দ যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বলেন। কারণ, তাঁদের নিয়োগ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং মঞ্জুরি কমিশনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী হয়নি।

রবিবার রাজভবনের তরফে ব্রাত্যের দফতরকেও আক্রমণ করা হয়েছে। রাজভবনের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল কোনও ভাবেই চান না যে রাজনীতি দিয়ে বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে কলুষিত করা হোক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকার ভঙ্গ করতে চাইছে শিক্ষা দফতর। বিবৃতিতে টেনে আনা হয়েছে বুদ্ধদেব-প্রসঙ্গও। রাজ্যপালের দাবি, তিনি ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট’ পন্থা অবলম্বন করেছেন। তাই আইন লঙ্ঘন করায় বুদ্ধদেবকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। কোন ‘আইন’ লঙ্ঘন করেছেন বুদ্ধদেব? রাজভবনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অনুরোধ সত্ত্বেও সমাবর্তন বাতিল করেননি রাজ্যপাল। কিন্তু তিনি সেই অনুমোদন দিতে পারেন কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে আইনি মতামত চান। অন্যথায় পড়ুয়াদের ডিগ্রিগুলি অবৈধ হয়ে যাবে। সেটা এড়াতে চান তিনি। অন্য দিকে, বুদ্ধদেব সমাবর্তনের আয়োজন করে ফেলেন। পাশাপাশি কলকাতা এসেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক জগদীশ, সেটাও ওই বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন আচার্য।

Advertisement

এর পাল্টা শিক্ষামন্ত্রী কটাক্ষ করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপালকে। সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বলেন, ‘‘উনি (সিভি আনন্দ বোস) তো সারা ক্ষণই তদন্তের মধ্যে যাচ্ছেন। তিনি নিজেই নিয়োগ করছেন, নিজেই বরখাস্ত করছেন। আবার নিজেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা উচ্চশিক্ষার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা চেয়ে এসেছি যে, সমাবর্তনটা হোক।’’ তিনি বোসের পদক্ষেপের পিছনে ‘কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা’ দেখছেন। ব্রাত্যের কথায় কথায়, ‘‘একটা সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করছেন।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, তাঁরা আইন অনুযায়ীই কাজ করছেন। কিন্তু আচার্যকে আমন্ত্রণ করা সত্ত্বেও তিনি সমাবর্তনে যাননি। অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যদের উদ্দেশে ব্রাত্যের বার্তা, ‘‘পান থেকে চুন খসলেই ওঁর গলাধাক্কা খেতে হবে। তাই ওঁদের বলব, ওঁর মুখে পদত্যাগপত্র ছুড়ে দিয়ে চলে আসুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement