সংস্কার হয়নি, বেহাল দশা বালির মাতৃসদনের

বাড়িটির একতলার দেওয়ালে লাগানো গ্লো-সাইন বোর্ডে নীল-সাদাতে লেখা— ‘হাওড়া পুরনিগম পরিচালিত বালি কেদারনাথ আরোগ্য ভবন’।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০২:২৭
Share:

জীর্ণ অবস্থা বালির এই হাসপাতালের। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘদিন তিনতলা বাড়িটিতে রঙের প্রলেপ যে পড়েনি, তা দেখলেই বোঝা যায়। বাড়ির গায়ে ইতিউতি জন্মেছে বট গাছ। পলেস্তারা খসে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়। জানলাগুলির অবস্থাও তথৈবচ। এক ঝটকায় ‘রোগগ্রস্ত’ এই বাড়িটি দেখলে বোঝাই দায় যে, সেটি আদতে পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদন হাসপাতাল!

Advertisement

বাড়িটির একতলার দেওয়ালে লাগানো গ্লো-সাইন বোর্ডে নীল-সাদাতে লেখা— ‘হাওড়া পুরনিগম পরিচালিত বালি কেদারনাথ আরোগ্য ভবন’। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দুতে লেখা সেই বোর্ড জ্বলজ্বল করলেও হাসপাতালের পরিষেবার মান নিয়ে বারবারই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, সরকার বদলালেও হাল বদলায়নি শতাব্দীপ্রাচীন এই হাসপাতালের।

পুরসভা সূত্রের খবর, হাওড়ার সঙ্গে বালি সংযুক্ত হওয়ার পরে এই হাসপাতালের দিকে নজর পড়ে পুর কর্তৃপক্ষের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ বার্তাকে সামনে রেখে হাসপাতালটি সংস্কারের পাশাপাশি, সমস্ত রকমের স্ত্রী-রোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা-সহ নিকু (নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই মতো ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সংস্কারের শিলান্যাসও হয়। নতুন হাসপাতাল কেমন দেখতে হবে, তার রূপরেখাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হাওড়া পুরসভার বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সেই সংস্কার প্রকল্পের কী হয়েছে, তা কেউ জানে না।

Advertisement

হাওড়া পুরসভার ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে জি টি রোডের উপরে দাঁড়িয়ে ওই হাসপাতাল। পিছনেই গঙ্গা। স্থানীয়েরা জানান, কয়েক বছর আগেও এই হাসপাতালের এতটাই গুরুত্ব ছিল যে প্রসূতিরা অনেক সময়েই শয্যা পেতেন না। বালি-বেলুড় পুর এলাকার পাশাপাশি, পঞ্চায়েত এলাকা এবং আশপাশের জেলা থেকেও প্রসূতিরা এখানে আসতেন। হাসপাতালের অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথির বহির্বিভাগেও রোগীর ভিড় লেগেই থাকত।

কিন্তু বালি পুরসভায় বাম বোর্ডের জমানার শেষের দিক থেকে ক্রমশ গুরুত্ব হারাতে শুরু করে এই মাতৃসদন। হাসপাতালের বিভিন্ন পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। প্রসূতিকে ইউএসজি করানোর সময়ে জলের বদলে ফিনাইল খাওয়ানো, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে শিশু-মৃত্যু অথবা নবজাতকের কোনও সমস্যা দেখা দিলেই তাকে অন্যত্র ‘রেফার’ করে দেওয়ার প্রবণতা— এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল বারবারই।

যদিও ওই হাসপাতালেই ২০০৫ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় তৈরি হয়েছিল নিকু। হাসপাতালের তিনতলায় নিকু-র পাশেই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নতুন অপারেশন থিয়েটার, আরএমও-দের কেবিন তৈরি করা হয়েছিল। অভিযোগ, উদ্বোধনের পর থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধই রয়ে গিয়েছে সেই নিকু বিভাগের দরজা। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, নতুন অপারেশন থিয়েটারে কয়েক দিন অস্ত্রোপচার হলেও পরে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে দোতলায় তিনটে ঘর নিয়ে চলা প্রসূতি বিভাগও ক্রমশ ধুঁকতে শুরু করে। ঘুপচি ঘরের মতো ওই ওয়ার্ডেই এখন রয়েছে প্রসূতি ও নবজাতকদের থাকার ব্যবস্থা। শতাব্দীপ্রাচীন ভবনটির অবস্থাও বিপজ্জনক। নেই পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাও।

এ নিয়ে হাওড়ার পুর কমিশনার ও প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আধুনিক ও উন্নত মানের হাসপাতাল তৈরির জন্য বারবার পরিদর্শন ও সমীক্ষা করে শিবপুর আইআইএসটি-র বিশেষজ্ঞরা ডিপিআর তৈরি করেছেন। সেটি পুরসভার তরফে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। তহবিল এলেই কাজ শুরু হবে।’’

কিন্তু রোগ সারিয়ে কবে ফের উঠে দাঁড়াবে শতাব্দীপ্রাচীন এই হাসপাতাল, তা নিয়েই সন্দিহান স্থানীয়েরা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement