বাংলা ছাড়ছে না বেঙ্গল কেমিক্যাল

বেঙ্গল কেমিক্যালকে এখনই বিলগ্নিকরণের পথে নিয়ে যেতে চায় না কেন্দ্র। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রী অনন্ত কুমার।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৩
Share:

বেঙ্গল কেমিক্যালকে এখনই বিলগ্নিকরণের পথে নিয়ে যেতে চায় না কেন্দ্র। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রী অনন্ত কুমার।

Advertisement

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সাংসদ ডি রাজার এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয় জানিয়েছিলেন, বেঙ্গল কেমিক্যালকে ‘স্ট্র্যাটেজিক সেল’ অর্থাৎ, ধাপে ধাপে বিলগ্নিকরণের পথে নিয়ে যেতে চান তাঁরা। এ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী কালে রাজ্যসভাতেই ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁকে সমর্থন করেন সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি-সহ আরও কয়েক জন। কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা শুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন মানিকতলার সদর দফতর-সহ বেঙ্গল কেমিক্যালের সব কর্মীরাই।

এ নিয়ে সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রী অনন্ত কুমারের সঙ্গে দেখা করেন মানিকতলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। বৈঠকের পরে সাধনবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আমাকে বলেছেন, প্রথমে ভাবা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, এখনই বেঙ্গল কেমিক্যালকে ‘স্ট্র্যাটেজিক সেল’ করা হচ্ছে না।’’

Advertisement

১৯০১ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাত ধরে মানিকতলায় স্বদেশি পণ্য তৈরির কারখানা হিসেবে
গড়ে উঠেছিল বেঙ্গল কেমিক্যাল। এটিই দেশের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা। পরবর্তী কালে পানিহাটি, মুম্বই ও কানপুরেও তৈরি হয়
বেঙ্গল কেমিক্যালের করাখানা। উৎকৃষ্ট মানের ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডার-সহ একাধিক পণ্য প্রস্তুতে বেঙ্গল কেমিক্যালের সুনাম রয়েছে। এক সময়ে সাপের বিষের
ওষুধও (অ্যান্টিভেনম সিরাম বা এভিএস) তৈরি হতো বেঙ্গল কেমিক্যালে। আরও অনেক ওষুধ তৈরি করত এই সংস্থা। তার মধ্যে জোয়ানের আরক বা অ্যাকোয়া-টাইকোটিস তো বহু বাঙালি পরিবারে জীবনের অঙ্গই হয়ে গিয়েছিল। এখনও দেশের নানা জায়গায় বেঙ্গল কেমিক্যালের পণ্যের বেশ কদর রয়েছে। ১৯৮১ সালে কেন্দ্রীয়
সরকার বেঙ্গল কেমিক্যালকে অধিগ্রহণ করে। সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, তার পর থেকেই লোকসানে চলতে শুরু করে এই সংস্থা। এক সময়ে সেখানে সাপের বিষের ওষুধ তৈরির কাজও বন্ধ হয়ে যায়।

সুখেন্দুবাবু জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ বেড়েছিল বেঙ্গল কেমিক্যালের কর্মীদের মধ্যে। এটি একটি হেরিটেজ সংস্থা। এখনও এর পণ্য উৎপাদন চালু রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ দিন লোকসানে চলার পরে ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে দেড় কোটি টাকা লাভের মুখও দেখাতে পেরেছে এই সংস্থা। বেঙ্গল কেমিক্যালের তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী ইউনিয়নের সভাপতি সাংসদ সৌগত রায়। রাজ্যসভার ঘোষণার পরে তিনিও কেন্দ্রীয়
মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সৌগতবাবু বলেন, ‘‘মন্ত্রী মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত বদলের আশ্বাস দিয়েছিলেন।’’ কিন্তু তার পরেও দুশ্চিন্তা রয়েই যায় কারখানার কর্মীদের মধ্যে। এর পরে তাঁরা স্থানীয় বিধায়ক সাধনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েক দিন আগে দিল্লিতে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অনন্ত কুমারের সঙ্গে দেখা করেন সাধনবাবু।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, কী কী করলে বেঙ্গল কেমিক্যাল আরও ভাল ভাবে চালানো যেতে পারে, সে বিষয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে সাধনবাবুর। সেই আলোচনাতেই উঠে এসেছে, পানিহাটিতে ওই সংস্থার অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রচুর জমির প্রসঙ্গও। সেই সব জমি যদি বিক্রি করা যায়, তা হলে সংস্থার হাতে বেশ খানিকটা টাকা আসবে। জমি বিক্রি করে পাওয়া সেই টাকা লাগানো যেতে পারে কারখানার উন্নয়নের কাজে। সাপের বিষের ওষুধ যাতে ফের তৈরি করা শুরু হয়, সে বিষয়েও কথা হয়েছে। এর আগেই এ ব্যাপারে বেঙ্গল কেমিক্যালের তরফে ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু টাকা না মেলায় সেই কাজ করা যায়নি বলে সংস্থার কর্মী ইউনিয়ন জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement