Nursing Home

হাসপাতালের গায়েই খাটাল! রোগীর চিকিৎসা মশার বাসস্থানেই

দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ ফাঁড়ি সংলগ্ন ‘আরোগ্য মেটারনিটি অ্যান্ড নার্সিংহোম’ চত্বর ঘিরে এমনই অভিযোগ তুলছেন সেখানে চিকিৎসা করাতে যাওয়া লোকজন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৩৬
Share:

অস্বাস্থ্যকর: হাসপাতালের উল্টো দিকেই রয়েছে এই খাটাল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

যে বাড়িতে হাসপাতাল, তার ঠিক পাশের বাড়িতেই রমরমিয়ে চলছে খাটাল! গরু-মোষ মিলিয়ে সেখানে রাখা হচ্ছে অন্তত সাতটি প্রাণীকে। দুর্গন্ধে ভরে উঠছে আশপাশ। গোবরের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে মশা এবং মাছির দল। যেখানে ডেঙ্গি রোগীদের ভর্তি করানো হচ্ছে চিকিৎসার জন্য, কার্যত তার পাশের দেওয়ালেই চলছে ‘মশার চাষ’!

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ ফাঁড়ি সংলগ্ন ‘আরোগ্য মেটারনিটি অ্যান্ড নার্সিংহোম’ চত্বর ঘিরে এমনই অভিযোগ তুলছেন সেখানে চিকিৎসা করাতে যাওয়া লোকজন। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘হাসপাতাল চত্বর তো ছেড়েই দিন, যেখানে শহরের কোথাওই খাটাল থাকার কথা নয়, সেখানে দিনের পর দিন এমন কাণ্ড-কারখানা চলে কী করে?’’ শহরে অন্তত বছর ১৫ আগেই খাটাল নিষিদ্ধ হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন পুলিশ-প্রশাসনের কারও এ দিকে নজর পড়ে না, সেই প্রশ্নও উঠছে।

অভিযোগ পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ওই হাসপাতালটি কলকাতা পুরসভার ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয়দের দাবি, আরোগ্য হাসপাতাল ভবনকে কেন্দ্র করে চার দিকে ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি বাড়ি তৈরি করেন ওই হাসপাতালের মালিকেরা। তার একটিতে প্রায় ২০টি ফ্ল্যাট অফিস চালানোর জন্য ভাড়া দেওয়া হয় নানা সংস্থাকে। একটি ভবনে চালানো হয় হাসপাতালের মালিক গোষ্ঠীর নিজস্ব কাপড়ের ব্যবসা। একটি বাড়িতে আবার ফ্ল্যাট রয়েছে প্রায় ৬০-৭০টির কাছাকাছি। সেগুলিকে বসতবাড়ি হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া, সেখানেই রয়েছে মালিক গোষ্ঠীর পেট্রল পাম্প এবং নিজস্ব বাসস্থান। কিছুটা জায়গা আবার আশপাশের লোকজনকে গাড়ি রাখার জন্যও ভাড়ায় দেওয়া হয়। এর মধ্যেই রয়েছে হাসপাতালের ভবন লাগোয়া খাটাল।

Advertisement

দেখা গেল, হাসপাতালের প্রবেশ-দ্বারের ঠিক উল্টো দিকে একটি লোহার গেট ঘেরা জায়গা রয়েছে। তার ভিতরে একতলা একটি বাড়ি। সেই বাড়ির নীচেই শুয়ে একটি গরু। পাশেই আরও খানিকটা ফাঁকা জায়গা। সেখানেও একসঙ্গে বাঁধা তিনটি গরু এবং দু’টি মোষ। বিচালি রাখা রয়েছে একটি পাত্রে। আশপাশে গোবরের স্তূপ। মাঝেমধ্যেই মল-মূত্র ত্যাগ করছে গরুর দল। ভনভন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাছি। মশার দাপটে সেখানে টেকাই দায়।

ওই লোহার গেটের বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘দুপুর বলে এখনও দাঁড়াতে পারছেন। সন্ধ্যার পরে এখানে থাকা অসম্ভব। যে দিন সন্ধ্যার শিফটে ডিউটি পড়ে, সে দিন খাটালের মশার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে আসি।’’ এর পরে তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েক জন রোগীর পরিবারও অভিযোগ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। খাটাল সরেনি।’’

যদিও পুরসভা সূত্রের খবর, অন্তত দেড় দশক আগেই এই শহরে খাটাল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এক সময়ে এ নিয়ে ধরপাকড়ও চলেছে। মূলত দূষণ এবং পতঙ্গবাহিত রোগের কথা মাথায় রেখেই সেই সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে গ্রিন ট্রাইবুনালও এ নিয়ে কড়া অবস্থান নেয়। কিন্তু তার পরেও হাসপাতালের পাশেই এই ভাবে খাটাল চলে কী করে? স্থানীয় ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমিত সিংহ বললেন, ‘‘কলকাতায় খাটাল রাখা নিষিদ্ধ। কিন্তু তার পরেও যদি কেউ লুকিয়ে এই কাজ করেন, কী বলব? দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার আবার বললেন, ‘‘এই জিনিস তো হওয়ার কথাই নয়। আসলে কেউ এত দিন অভিযোগ করেননি।’’ কিন্তু অভিযোগের জন্য কেন অপেক্ষা করা হবে? কেন আগেই পদক্ষেপ করা হবে না? স্থানীয় পুরকর্মীরা কি তবে এলাকার খোঁজখবর রাখেন না? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

খাটাল এবং হাসপাতালের মালিক রাজবর্ধন সিংহ বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও যে খাটাল রাখা যাবে না, তা জানতাম না। স্বাস্থ্যের বিষয় যখন জড়িয়ে যাচ্ছে, তখন দ্রুত পদক্ষেপ করব। এক সপ্তাহের মধ্যে ওই খাটাল শহরের বাইরে স্থানান্তরিত করব।’’

এই আশ্বাস বাস্তবায়িত হবে তো? উত্তর মিলবে কয়েক দিনেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement